ভারত পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছি : গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘সামাজিক উন্নয়নের ফলে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে চার-পাঁচ বছর পেছনে ফেলে দিয়েছি।’
আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম আয়োজিত ‘জীবনের কথা, অর্থনীতির কথা’ শীর্ষক এক সেমিনারে ড. আতিউর রহমান এসব কথা বলেন।
নিজের ব্যক্তিজীবনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গভর্নর বলেন, ‘জীবনের পথে দারিদ্র্য আমাকে পরাভূত করেতে পারেনি। কারণ দারিদ্র্যকে আমি শক্তিধর হওয়ার পূর্বশর্ত মনে করেছি। এখানে দারিদ্র্য আমার জীবনের শুধু বাস্তবতা মাত্র।’
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির গল্প এখন শুধু বাঙালির কাছেই নয়, সারা বিশ্বের কাছে এক কৌতূহলের বিষয়। সারা পৃথিবী এখন জানতে চায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী এমন ঘটেছে যার ফলে বিশ্বমন্দার মধ্যেও দেশটি গত কয়েক দশক ধরে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। জিডিপির ভিত্তিতে দেশটির স্থান এখন বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম। সামাজিক উন্নয়নের ফলে এ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা ভারত ও পাকিস্তানকে চার-পাঁচ বছর পেছনে ফেলে দিয়েছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আরো বলেন, ‘বতর্মান সময়ে আমাদের সব সূচকেই স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। আমদানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে। সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যের হার, গড় আয়ুসহ অনেক সূচকেই ইতিবাচক পরিবর্তন এখন লক্ষণীয়। সেই সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কমেছে মূল্যস্ফীতির হারও। তা ছাড়া দারিদ্র্য প্রায় ৬০ ভাগ থেকে ২২ ভাগে নেমে এসেছে। টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল ও জোরালো অবস্থায় রয়েছে।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রেখেই আমরা উন্নয়নমুখী ব্যাংকিং, দরিদ্রের ক্ষমতায়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক নয়া ধারা চালু করেছি। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক ৫০০ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়।’
বহির্বিশ্বে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব নীতিকে এখন দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হয়। আর্থিক খাতে আমাদের অর্জিত স্থিতিশীলতাও এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশের কাছেই মডেল। বিশ্বের নানা কোণ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পুরস্কৃতও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর আতিউর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চত্বরে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পাঠক ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন শুভ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরামের ভবন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়।