ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত, প্রতিবাদ করায় সাংবাদিককে ছাত্রলীগকর্মীর থাপ্পড়
ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কর্মরত এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। আজ সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার শিকার মর্তুজা নূর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি স্থানীয় দৈনিক উত্তরা প্রতিদিনের রাবি প্রতিনিধি।
অভিযুক্তরা হলেন দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী মিল্টন ও মাসুম, বহিরাগত ছাত্রলীগকর্মী নয়ন। এর মধ্যে মিল্টন রাবি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জুর মামাতো ভাই।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী আজ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় সেখানে বসে থাকা একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী মিল্টন, মাসুমসহ কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী ওই ছাত্রীর পথরোধ করেন। কয়েকজন বহিরাগতও তাঁদের সঙ্গে ছিল। তাঁরা ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এ সময় পাশেই থাকা ওই ছাত্রীর বন্ধু রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক উত্তরা প্রতিদিনের রাবি প্রতিনিধি মর্তুজা নূরসহ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে এগিয়ে যান। তাঁরা ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এ সময় ছাত্রলীগকর্মী মিল্টনের সঙ্গে থাকা বহিরাগত ছাত্রলীগকর্মী নয়ন সাংবাদিক মর্তুজা নূরকে থাপ্পড় দেয়। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর মিল্টন নিজেকে ছাত্রলীগকর্মী পরিচয় দিয়ে তাঁদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।
ছাত্রলীগকর্মী মিল্টন বলেন, ‘পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওই মেয়েকে আমাদের একজন ডাক দেয়। ওই ছাত্রী এসে দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়ে জানালে আমিও ওই বিভাগের বড় ভাই বলে তাকে পরিচয় দেই। এ সময় আমার পাশে থাকা কয়েকজন ওই ছাত্রীকে কয়েকটি প্রশ্ন করে। এটা দেখে তার বন্ধুরা চোখ রাঙিয়ে আমাদের দিকে এলে আমাদের সঙ্গে থাকা একজন তাদের একজনকে চড় মারে।’
এ ব্যাপারে মর্তুজা নূর বলেন, ‘আমার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করায় প্রতিবাদ করেছিলাম। এ সময় বহিরাগত নয়ন নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী আমাকে চড় মারে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু বলেন, ‘আমি তাদের (ছাত্রলীগ কর্মী) ডেকে নিয়ে বিষয়টি শুনেছি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিষয়টি নিয়ে বসা হবে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু বলেছিলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি, এই ক্যাম্পাসে বহিরাগত বা স্থানীয়দের প্রভাব পড়তে দেব না।’ তবে রাঞ্জুর ক্ষমতাবলেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন মর্তুজা নূর।
রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে জড়িতদের সবার পরিচয় এখনো পাইনি। অভিযুক্তদের বিষয়ে পরিচয় পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন, রাজশাহী প্রেসক্লাব, রাবি সাংবাদিক সমিতি ও রাবি প্রেসক্লাব।