বিচার বিভাগ ফেরেশতা না : প্রধান বিচারপতি
দেশের নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত রায় কেনাবেচা হয়-এ ধরনের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তবে যেখানে সমাজে অনিয়ম রয়েছে, সেখানে বিচার বিভাগ হঠাৎ ফেরেশতা হয়ে যাবে এটা কোনোমতেই আশা করা যায় না বলেও মন্তব্য করে তিনি।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
‘বাংলাদেশের আইনের সংস্কার ও আইন কমিশন’ এবং ‘সিলেক্টেড রাইটিংস অন ইন্টারন্যাশনাল ল’, কনস্টিটিউশনাল ল’ অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ গ্রন্থ দুটি রচনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ও আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. এম শাহ আলম।
অনুষ্ঠানের একটি পর্বে অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমার বলতে দ্বিধা নেই, গবেষণাভিত্তিক কথা এটা, লোয়ার কোর্ট থেকে শুরু করে হাইকোর্ট পর্যন্ত আইনের রায় বেচাকেনা হয়।’
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি সগর্বে এখানে ঘোষণা করছি, আমার বিচার বিভাগে কোনো রায় বেচাকেনা হয় না। হ্যাঁ, এখানে হচ্ছে, আমি অস্বীকার করছি না। বিচার বিভাগ আলাদা কোনো দ্বীপের মতো না। এখানে সারা (সমাজে) ইরেগুলারিটিজ চলবে, আর হঠাৎ বিচার বিভাগের সদস্যরা ফেরেশতা হয়ে যাবে- এটা কোনোমতেই আশা করা যায় না। এটা করলে আপনারা ভুল করবেন।’
এ সময় দেশে যুগোপযোগী আইন তৈরি হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচাপরপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি শত বছরের পুরোনো আইনগুলো সংস্কারের তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ১৮৩৬ ও ১৮৭২ সালের পুরোনো আইনগুলোর কার্যকারিতা একেবারেই কমে গেছে। দ্রুত এগুলোর সংস্কার দরকার।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের আইনপ্রণেতাদের সবচেয়ে বড় জিনিস হল, তাদের আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা। এতে আমাদের ইনস্টিটিউশনগুলো- যেমন পার্লামেন্ট, যেখানে আইনের চর্চা হবে, এটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। এখন টেকনোলজি করাপশন এমনভাবে বেড়ে গেছে এটার সঙ্গে এবসলিট আইন নিয়ে কোনোমতেই আপনারা ন্যায়বিচার করতে পারবেন না। এটাকে ঢেলে সাজাতে হবে।’
এ সময় চাঞ্চল্যকর কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কুমিল্লায় একটা অপরাধ হয়েছে। এটার (তদন্ত) একেবারে সায়েন্টিফিক ও মডার্ন ওয়েতে করতে হবে। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ক্রিমিনাল প্রসিকিউর দিয়ে আপনি ইনভেস্টিগেশন করতে পারবেন না।’
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, সংসদ সদস্য বা সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কাউকে আবার বসানো সম্ভব। কিন্তু বিচার বিভাগ শেষ হয়ে গেলে জনগণের যাওয়ার আর জায়গা থাকবে না।
বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা ধরে রাখতে যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, লেখক অধ্যাপক ড. এম শাহ আলম প্রমুখ।