একই মঞ্চে নিজামীর ফাঁসি
মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর একই মঞ্চে ফাঁসি কার্যকর হবে, যেখানে এর আগে আরো কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
এই মঞ্চেই জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানিয়েছে।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে পুরাতন ফাঁসির মঞ্চে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের তাঁর ফাঁসি প্রথম কার্যকর করা হয়।
২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ওই মঞ্চে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ১২ জন সশস্ত্র কারারক্ষী, ইমাম, ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, জেল সুপার ও জেলারের উপস্থিতিতে ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ রাজু।
২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর সাকা চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে একই সময় পাশাপাশি রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ওই ফাঁসির মঞ্চে বিশেষ ব্যবস্থায় দণ্ড কার্যকর করা হয়।
এদিকে, কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজামীর ফাঁসির প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে শেষ বারের মতো দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গেছেন স্বজনরা।
কারাসূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করতে জল্লাদ রাজু ও সহযোগীরা মহড়া শুরু করেছেন। ফাঁসি দেওয়ার আগে জামায়াত নেতাকে গোসল করানো হবে এবং যমটুপি পরিয়ে ফাঁসিমঞ্চে তোলা হবে। এ সময় উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো. সালাহ উদ্দিন, সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা, জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে নিজামীকে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় পড়ে শোনানো হয়। এদিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়া রায় প্রকাশ করেন। এরপর বিকেল ৫টার পর আপিল বিভাগের একটি প্রতিনিধিদল রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেদিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে লাল কাপড়ে মোড়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে রওনা হয়। পরে ৭টা ৫ মিনিটে জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর রায়ের কপি নেন।
গত রোববার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়।
গত ৫ মে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জামায়াত নেতা। পরে আপিলের রায়েও তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ, ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপেরিয়র রেসপনসিবিলিটি।