প্রস্তুত কমিশন, অপেক্ষা ভোটগ্রহণের
সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (নিক)। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে গেছে।
২৮ এপ্রিলের নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবেন। এ জন্য সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।’
গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৮০ হাজার আনসার, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবির সদস্য নির্বাচনে নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রয়োজনের কথা জানালে সেনাবাহিনী চলে আসবে।’
সচিব বলেন, ‘প্রতিটি স্বাভাবিক কেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে ২৪ জন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করবেন। এর সঙ্গে কেন্দ্র বিবেচনায় ১০-১২ জন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মীও থাকবেন। এর বাইরে প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে পুলিশের মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া প্রতি দুই ওয়ার্ডে র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। তিন সিটিতে প্রায় ১০০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য নিয়োজিত থাকবে।’
নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে ডিএমপি ও এমপি থেকে গতকাল রাত ১২টা থেকে মোটরসাইকেল এবং নির্বাচনের আগের রাত থেকে সব যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গত রাত ১২টার মধ্যে বহিরাগতদের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অঞ্চল ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অঞ্চল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আচরণবিধি অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে কেউ জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান করতে এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে অথবা তাতে যোগ দিতে পারবে না।’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর থেকে প্রতি সিটিতে ছয়জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আজ রোববার থেকে আরো নয়জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছেন। তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
নির্বাচনী পরিবেশ ভালো রাখার জন্য আজ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নামছেন। ঢাকা উত্তরে সেনাবাহিনী এক ব্যাটালিয়ন (৭৪১) জন; বিজিবি ৩৫ প্লাটুন (এক প্লাটুন = ৩৪ জন); কোস্টগার্ড দুই প্লাটুন (৬৮ জন); র্যাব ৭২ টিম (৫৭৬ জন); পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৭২ টিম ( ৫৭৬ জন); পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স ১৮ টিম (২৮৮ জন); পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ৭ x ১০৯৩ = ৭৬৫১ জন; ব্যাটালিয়ন আনসার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১ x ১০৯৩ জন এবং ব্যাটালিয়ন আনসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৩ x ১০৯৩ = ৩২৭৯ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১৬ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৮৯ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৮১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম ও ১২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঢাকা উত্তরে সংরক্ষিত ১২ ও সাধারণ ৩৬টি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ৯৩টি, ভোটকক্ষ পাঁচ হাজার ৮৯২টি এবং মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৩ জন এবং পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৪ হাজার ৭০১ জন।
ঢাকা উত্তরে প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন এক হাজার ৯৩ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার পাঁচ হাজার ৮৯২ জন ও পোলিং অফিসার ১১ হাজার ৭৮৪ জন। এই সিটিতে মোট ১৮ হাজার ৭৬৯ জন নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী এক ব্যাটালিয়ন (৭৪১) জন, বিজিবি ৩৫ প্লাটুন (এক প্লাটুন = ৩৪ জন), কোস্টগার্ড দুই প্লাটুন (৬৮ জন), র্যাব ১১৪ টিম (৯১২ জন); পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ১১৪ টিম (৯১২ জন); পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স ২৮ টিম (৪৪৮ জন), পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ৭ x ৮৮৯ = ৬২২৩ জন, ব্যাটালিয়ন আনসার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১ x ৮৮৯ জন, ব্যাটালিয়ন আনসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৩ x ৮৮৯ = ২৬৬৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা দক্ষিণে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ এবং ১৯ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ঢাকা দক্ষিণের ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড ও ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে মেয়র পদে ২০ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৯৭ ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এই সিটিতে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৮৯টি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা চার হাজার ৭৪৬টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার আট লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭ জন এবং পুরুষ ভোটার ১০ লাখ নয় হাজার ২৮৬ জন।
এই সিটিতে প্রিসাইডিং অফিসার ৮৮৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার চার হাজার ৭৪৬ জন এবং পোলিং অফিসার নয় হাজার ৪৯২ জন। আর ১৫ হাজার ১২৭ কর্মকর্তা নির্বাচনে নিয়োজিত থাকবেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী এক ব্যাটালিয়ন (৭৪১) জন, বিজিবি ৩০ প্লাটুন (এক প্লাটুন = ৩৪ জন), কোস্টগার্ড তিন প্লাটুন (১০২ জন), র্যাব ৮২ টিম (৬৫৬ জন); পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল ফোর্স ৮২ টিম (৬৫৬ জন); পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স ২০ টিম (৩২০ জন), পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ৭ x ৭১৯ = ৫০৩৩ জন, ব্যাটালিয়ন আনসার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১ x ৭১৯ জন, ব্যাটালিয়ন আনসার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ৩ x ৭১৯ = ২১৫৭ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও ১৪ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম সিটিতে ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড ও ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে মেয়র পদে ১২ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৬২ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই সিটিতে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭১৯টি এবং ভোটকক্ষ চার হাজার ৯০৬টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার আট লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন এবং পুরুষ ভোটার নয় লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ জন।
চট্টগ্রামে প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন ৭১৯ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার চার হাজার ৯০৬ জন। পোলিং অফিসারের সংখ্যা নয় হাজার ৮১২ জন। মোট ১৫ হাজার ৪৩৭ জন কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকবেন।