লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে : সিইসি
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। এ সময় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে তা বরদাশত করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন সিইসি।
আজ সোমবার বিকেলে নির্বাচনের একদিন আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্বাচন করেছি। প্রার্থীরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে প্রচার চালিয়েছেন। এতে এটাই প্রমাণ করে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হয়েছে। যে কয়টা ভুল হয়েছে, তা ছোটখাটো। আমরাও চেষ্টা করছি যেন সবার জন্য সমান সুযোগ থাকে।’
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব ইসি বরদাশত করবে না। সকলকে নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিচ্ছি। এর ব্যত্যয় বদদাশত করা হবে না।’ তিনি বলেন, তিন সিটি নির্বাচনে ৪৯ হাজার ৩৩৩ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য থাকবে। সাধারণ কেন্দ্রে ২২ ও ঝুঁকিপূর্ণ ২৪ জন করে ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে।
‘সব মিলিয়ে ভোটের দিন প্রায় ৮০ হাজার সদস্য নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করবে। এ ছাড়া ভোটারদের আশ্বস্ত করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য সেনা জোয়ানরা ক্যান্টনমেন্টে প্রস্তুত অবস্থায় থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ডাকলেই তারা মুভ করবে। তাদের সাথে ১৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সেনাবাহিনীকে ডাকবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ফেল করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সেনাবাহিনীকে ডাকবেন। এ ছাড়া যদি এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে, সেনাবাহিনীকে প্রয়োজন, তখন তাদের ডাকা হবে।
‘ঢাকা সিটি নির্বাচনের জন্য ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, পোস্তগোলা ক্যান্টনমেন্টে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দুই ব্যাটালিয়ন সেনাসদস্য অবস্থান নেবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটির জন্য দামপাড়া ক্যান্টনমেন্ট, হালিশহর ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে এক ব্যাটালিয়ন সেনা রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান নেবে।’
সিইসি বলেন, নির্বাচনের পরের দিন পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবে। ভোটার, বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনে চার হাজার দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, শতাধিক বিদেশি এবং ব্যাপক সংখ্যক স্থানীয় পর্যবেক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটারদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আপনারা পছন্দমতো যাকে খুশি তাঁকে ভোট দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরবেন।’
মোবাইলে এসএমএস
সিইসি বলেন, ভোটারদের সুবিধার জন্য মোবাইলে এসএমএস ও কলসেন্টার এবং অনলাইনে ভোটকেন্দ্র ও ভোটার নম্বর জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরই মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার ভোটার এ সেবা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া কল সেন্টারের মাধ্যমে তিন হাজার ভোটার এবং ওয়েবসাইট থেকে ৩৫ হাজার ভোটার তাঁদের ভোটকেন্দ্র ও ভোটার নম্বর জেনে নিয়েছেন।
প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আপনারা একে অপরের প্রতি সহিষ্ণু হোন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল থেকে জনগণের রায় মেনে নিন।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘রাস্তাঘাটে টহল শুরু হয়েছে। কিন্তু চোরাগুপ্তা হামলা হলে বা হঠাৎ হামলা হলে ধরা যায় না। আমরা এসব বিষয়ে খুবই অ্যাকটিভ। পুলিশকে বলেছি তারা যেন খুব ইমিডিয়েটলি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়।’
নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক প্রার্থীর প্রশ্ন তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ছয় ছয়টা নির্বাচন করেছি। সব নির্বাচন গুরুত্বসহকারে নিয়ে থাকি। কাজেই ইসির স্বাধীনতা আপনারাই বিচার করবেন।’
সিইসি বলেন, ‘তিনটি নির্বাচনের যে কর্মযজ্ঞ তার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচনের প্রশিক্ষণ শেষ, কেন্দ্রে কেন্দ্রে মালামাল পৌঁছে গেছে। সংখ্যার দিকে থেকে অন্য যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে ফোর্স বেশি। আশা করি, বিজয়ী এবং বিজিত প্রার্থী ফলাফল মেনে নেবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সচিব জেসুমিন টুলী, জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ করবে ইসি।