রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে
বর্ষা শুরু হওয়ার আগ থেকেই গোটা দেশজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ঢাকা মহানগরীতে। তালিকায় ঢাকার পরেই রয়েছে কক্সবাজার জেলা। পর্যটন জেলাটিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে সহস্রাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
আজ রোববার (২৮ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জায়গায় কম, মানুষ বেশি। ফলে, সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত সেখানে এক হাজার ৬৬ জনের দেহে ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে।’
নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর পর দেশের সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারে। জেলার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও অপ্রতুল। এর ফলে তারা বিভিন্ন গর্ত থেকে পানি সংগ্রহ এবং অনেক সময় পানি খোলা পাত্রে রেখে দেয়। এ ছাড়া তাদের সচেতনতার বিষয়টি আরও কম।’
রোহিঙ্গা শিবিরে ভাইরাসটি প্রতিরোধ করা কঠিন জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা জনগোষ্ঠীর মানুষদের মাঝে সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের সংস্কৃতি আলাদা হওয়ায় এ ব্যাপারে কাজও সেভাবে করা যায় না।’
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। ডেঙ্গু পরিক্ষায় অতিরিক্ত অর্থ নিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০ টাকা। এর বেশি নেওয়া যাবে না। যদি নেওয়া হয়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিব। ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমরা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করে দিয়েছি। এর গাইডলাইন অনুযায়ীই সবাইকে চিকিৎসা দিতে হবে। প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে।’
ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি ঢাকা মহানগরীতে। কোন এলাকায় ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেশি, এ নিয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিষয়টি নিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় যেখানে ঘনবসতি বেশি সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। তবে, নির্দিষ্ট করে কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি সেটি বলা এই মুহূর্তে কঠিন। রোগীদের তথ্য যাচাই করে তারপর বলা যাবে। আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের।’
রোগী জটিলতার ব্যাপারে অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নগরী গড়ে উঠছে। ঠিক ব্রাজিলের মতোই। ফলে, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেই আমরা প্লাটিলেটকে সামনে আনি। অথচ, এটি সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের উচিত সচেতনতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।’