সাঈদীর চিকিৎসককে হত্যার হুমকিদাতা শিবিরের সদস্য
মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াতনেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক এস এম মোস্তফা জামানকে হুমকিদাতা গ্রেপ্তার হওয়া তাফসিরুল ইসলাম ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় সদস্য।
তাফসিরুল বাবা রফিকুল ইসলাম রফিও এলাকার জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। ২০১৩-১৪ সালে এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির অপরাধে রফির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয় এবং তিনি কারাভোগ করেন। বুধবার (১৬ আগস্ট) রাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর থেকে তাফসিরুলকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রমণ থেকে ভয়ভীতি দেখানোর জন্যই তাফসিরুল ওই চিকিৎসককে হত্যার হুমকি দেন। চিকিৎসায় সাঈদীর পরিবারও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারপরেও যারা এই চিকিৎসককে হেয় করে কথা বলছেন ও হুমকি দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব কাজ করছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৩ আগস্ট জামায়াত নেতা সাঈদী অসুস্থ হওয়ায় তাকে বিএসএমএমইউর জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। গত ১৪ আগস্ট রাতে তিনি মারা যান। সাঈদী চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বিশেষজ্ঞ টিম আন্তরিকতার সঙ্গে চিকিৎসা করেন। সাঈদীর পরিবারও তার চিকিৎসার ব্যাপারে চিকিৎসকদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ চিকিৎসক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া ডা. এস এম মোস্তফা জামানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পাশাপাশি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী চিকিৎসকের এ বিষয়ে ধানমণ্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) প্রেক্ষিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও ৬ এর একটি আভিযানিক দল ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাফসিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত তাফসিরুল জামায়াতনেতা সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারসহ চিকিৎসক মোস্তফা জামানকে ফেসবুকে ও মোবাইলফোনে ম্যাসেজ দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানান র্যাব কমান্ডার।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে খন্দকার আল মঈন বলেন, তাফসিরুল স্থানীয় একটি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছেন। তিনি স্কুল জীবন থেকেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন সক্রিয় সদস্য। আইটিতে দক্ষ হওয়ায় অনলাইনে ইমেইল মার্কেটিংয়ের কাজ করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতেন।
খন্দকার আল মঈন জানান, তাফসিরুলের বাবা রফিকুল ইসলাম রফি এলাকার জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। ২০১৩-১৪ সালে এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির অপরাধে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয় এবং এসব মামলায় কারাভোগ করেন।
গ্রেপ্তারকৃত তাফসিরুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারিয়াপুর, মহেশপুর#তাফসিরুল ইসলাম’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দ্বারিয়াপুর, মহেশপুর@তাফসিরুল ইসলাম’ নামে দুটি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন।
মূলত দলীয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শ, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশ থেকে জামায়াতনেতা সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক মোস্তফা জামানের ব্যক্তিগত মোবাইলফোন নম্বর বিভিন্ন মাধ্যমে খুঁজে বের করে হোয়াটসঅ্যাপে হত্যার হুমকি দেন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, পরে চিকিৎসক মোস্তফা জামান জিডি করলে তাফসিরুল মেসেজ হোয়াটসঅ্যাপ থেকে মুছে ফেলেন। কিন্তু, তার মোবাইলফোনে হত্যার হুমকি সম্বলিত মেসেজের স্ক্রিনশট পাওয়া যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘যারা চিকিৎসককে হেয় করে কথা বলছেন ও হুমকি দিচ্ছেন তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি।’