বিশ্ব নৌ-দিবসের সাফল্য কামনা করলেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী
আজ ২৪ সেপ্টেম্বর (রোববার), বিশ্ব নৌ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘এমএআরপিওএল অ্যাট ফিফটি-আওয়ার কমিটমেন্ট গো অন’। এ দিবস উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এমএআরপিওএল মানে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রিভেনশন অব পোল্যুশন ফ্রম শিপ, অর্থাৎ এমএআরপিওএল হচ্ছে অপারেশনাল বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে জাহাজ দ্বারা সামুদ্রিক পরিবেশের দূষণ প্রতিরোধের প্রধান আন্তর্জাতিক কনভেনশন। এটি ১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কর্তৃক গৃহীত এবং ১৯৭৮ সালে কার্যকর হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তাদের বাণীতে প্রতিপাদ্যের সঙ্গে এই দিবসটি উদযাপনের জন্য জাহাজ শিল্প সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়, কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাসহ সবার প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বিশ্বের অন্যান্য আইএমও সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ‘বিশ্ব নৌ দিবস ২০২৩’ উদযাপন করছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সামুদ্রিক শিল্প আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী খাদ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, জ্বালানি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যসহ মোট বাণিজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি পরিবহণের জন্য শিপিংয়ের ওপর নির্ভর করে। এই ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে জাহাজের মাধ্যমে সামুদ্রিক পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়ায়।’
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে, এমএআরপিওএল (জাহাজ থেকে দূষণ প্রতিরোধের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন) পরিবেশগত দায়িত্বের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেছে। পাশাপাশি, এটি সামুদ্রিক দেশগুলোকে পরিচ্ছন্ন সমুদ্র এবং আরও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, “এমএআরপিওএলের সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘এমএআরপিওএল এট ৫০-আওয়ার কমিটমেন্ট গো অন’ প্রতিপাদ্যটি সময়োপযোগী, যা অবশেষে সামুদ্রিক দূষণ রোধ ও সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণে জাতির নিবেদনেরই সারসংক্ষেপ।”
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘একটি সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ঐতিহ্যে ঋদ্ধ বাংলাদেশ একটি দূষণমুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশ এবং আমাদের জনগণের কল্যাণের মধ্যে সংযোগকে দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি দেয়।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ গর্বিতভাবে সেসব দেশের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, যারা এমএআরপিওএলের নীতিগুলোকে গ্রহণ করেছে এবং বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য বাস্তবসম্মতভাবে তাদের বাস্তবায়ন করেছে।’
মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে, আমরা কনভেনশন অনুযায়ী নিয়ম-নীতিগুলো মেনে চলার মাধ্যমে পরিষ্কার বাতাস, পরিষ্কার পানি ও সামুদ্রিক আবর্জনা হ্রাস করার দিকে অগ্রসর হয়েছি।’
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ আরও টেকসই সামুদ্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য, সামুদ্রিক দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নের সুবিধার্থে বন্দরের সক্ষমতা ও অন্যান্য অবকাঠামো সম্প্রসারণ করছে।’
মো. সাহাবুদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, সমস্ত কর্তৃপক্ষ ও স্টেকহোল্ডার নির্গমন হ্রাস, বর্জ্য হ্রাস ও পরিবেশ-বান্ধব সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণের হাতিয়ার হিসেবে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি গ্রহণ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য আইএমও সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ব নৌ দিবস উদযাপন করছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই উপলক্ষটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, আমরা সামুদ্রিক ক্ষেত্রটির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এগিয়ে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্রের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেছিলেন।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী এই আইনের একটি আধুনিক সংস্করণ হিসেবে টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস (সংশোধিত) আইন, ২০২১ গ্রহণ করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং আইন ও বিধি প্রণয়ন করেন। আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এ বছরের ‘এমএআরপিওএল অ্যাট ফিফটি, আওয়ার কমিটমেন্ট গো অন’ এই প্রতিপাদ্যটি টেকসই উন্নয়নের জন্য সামুদ্রিক দূষণ থেকে সমুদ্রকে রক্ষা ও সংরক্ষণে রাষ্ট্রগুলোর অভিন্ন দায়িত্বে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্ধশতাব্দী ধরে জাহাজ থেকে দূষণ প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন (এমএআরপিওএল) একটি পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য আশার আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা এমএআরপিওএলের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করার সময় জাহাজ থেকে দূষণ হ্রাস এবং বিশ্বব্যাপী টেকসই শিপিং অনুশীলনের প্রচারে অগ্রগতি স্বীকার করি। বিস্তৃত উপকূলরেখা ও সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ইতিহাসে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের পরিবেশের ওপর সামুদ্রিক কার্যকলাপের গভীর প্রভাব বুঝতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে জাহাজ থেকে দূষণ রোধ করতে এবং আমাদের সমুদ্রের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব বাড়াতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। এমএআরপিওএলের নীতিগুলো সমুন্নত রাখার মাধ্যমে আমরা কেবল আমাদের জাতির মঙ্গলই নয়, বরং পরিবেশ সংরক্ষণের বৈশ্বিক অঙ্গনেও অবদান রাখি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিশ্ব নৌ দিবসে, আসুন আমরা নিজেদেরকে এমএআরপিওএল-এর আদর্শের সঙ্গে পুনরায় অঙ্গীকার করি। আমাদের প্রতিশ্রুতি যেন স্থায়ী হয় এবং আমাদের সমুদ্রগুলো যেন আগামী প্রজন্মের জন্য জীবন, অনুপ্রেরণা ও সমৃদ্ধির উৎস হয়ে থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’