পালিয়ে শেষ রক্ষা হলো না মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যানের
ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। চাঁদাবাজি, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন ইউপি সদস্য (মেম্বার) আনোয়ার হোসেন। দ্বন্দের জেরেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় ওই মেম্বারকে। এ ঘটনায় ওই চেয়ারম্যানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। সাজার পরেই ছাড়েন দেশ। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে পালিয়ে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না ওই চেয়ারম্যানের। ফিরে এসেই র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।
বলছিলাম কোরনীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের কথা। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরের রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রোহিতপুর ইউনিয়নের মেম্বার আনোয়ার হোসেনকে (৫০) ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায় তৎকালীন চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনের লোকজন। পরে কেরানীগঞ্জের সৈয়দপুর ঘাট এলাকা থেকে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আনোয়ারের।
এ ঘটনায় ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে কেরানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের স্ত্রী। এরপর থেকেই গা ঢাকা দেন কামাল উদ্দিন। ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট হত্যা পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেওয়ায় কামাল উদ্দিনসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তিনজনকে খালাস দেন আদালত।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মূলত কামাল উদ্দিনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আনোয়ার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় কামাল সন্ত্রাসী দল গঠন করে অবৈধ বালুর ব্যবসা, ভূমি দখল, ত্রাণের মালামাল কুক্ষিগত করতেন। আনোয়ার বিভিন্ন সময় এ নিয়ে প্রতিবাদ করতেন। এতে তিনি এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কামালের অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তিনি ধারণা করেন আনোয়ার এসবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এজন্য তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সৈয়দপুর ঘাটে মাছের আড়তে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ার। নৌকায় ওঠার সময় কামালের নেতৃত্বে আট থেকে ১০ জন ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আনোয়ারের ওপর হামলা চালায়। এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয় তাকে। আনোয়ারের চিৎকারে আশপাশের লোকজন চলে এলে পালিয়ে যান কামাল ও তার লোকজন।
খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার এড়াতে ২০০৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান কামাল। এরপর ২০১৬ সালে দেশে ফেরেন তিনি। নাম-পরিচয় গোপন রেখে বসবাস করতে থাকেন সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়। এরপর বিভিন্ন সময় অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। অবশেষে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।