সংবিধান ও আইনকানুনের কবর রচনা করা হয়েছে : রিজভী
‘দেশের সংবিধান ও আইনকানুনের কবর রচনা করা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার অপরিসীম ক্ষমতায় আইনকানুন, নিয়ম-নীতি, সংবিধান, শৃঙ্খলা সবকিছু পদতলে পিস্ট করেছেন। তার বক্তব্য ভ্রান্ত ও মিথ্যা তথ্যের সমষ্টি ছাড়া কিছুই নয়। তাদের উদ্ভট কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, পেছন থেকে কেউ ধাওয়া করছে, আর তারা প্রাণ বাঁচাতে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াচ্ছেন।’
আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পূর্বনির্ধারিত ফলাফলের ভোটরঙ্গ ও ভোট গণনা শেষ না হতেই ডামি এমপিদের নামে গেজেট, শপথগ্রহণ, মন্ত্রিপরিষদের নাম ঘোষণা, মন্ত্রীদের শপথ—চারদিনেই অভাবনীয় দ্রুততায় বিশ্ব রেকর্ড করে ভেবেছে বিপদমুক্ত হলেন শেখ হাসিনা। তাকে মনে হচ্ছে অস্থির। ভীতি-ত্রাসে তাড়াহুড়ো করে ক্ষমতা নবায়ন করার অবৈধ শপথ নিতে গিয়ে আইনকানুন ও সংবিধানের কবর রচনা করা হয়েছে। এমনিতেই সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে শেখ হাসিনা আতম্ভরী ও ভাববিলাসী নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিশ্চিত করেছেন।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘সংবিধানের ৭২(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি আগে ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে। যেহেতু রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেননি, তার মানে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ সংসদের যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তারা সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে দেশে মিডনাইট একাদশ সংসদের ৩৫০ জন আর ডামি দ্বাদশ সংসদের ২৯৮ জন মোট ৬৪৮ জন শপথবদ্ধ এমপি রয়েছেন। এখন রাষ্ট্রপতি সংসদ ডাকলে দুই সংসদের সদস্যরাই তাতে যোগ দিতে পারেন। অথচ এটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। আগামী ২৯ জানুয়ারি একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়া অবধি এই অরাজকতা থাকবে। এটি একটি চরম সাংবিধানিক লঙ্ঘন। গণতন্ত্র ও দেশের স্বার্থে এই সময়ের মধ্যে দ্বাদশ অবৈধ সংসদ বাতিল করে দিতে পারে উচ্চ আদালত। জনগণের প্রত্যাশা শেষ আশ্রয়স্থল আদালত তাদের যুগান্তকারী ভূমিকা নিতে পারে।’
রিজভী বলেন, ‘বর্তমানে দুটি সংসদ বহাল, অর্থাৎ প্রতি আসনে এখন দুজন করে এমপি। সত্যিই সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। সংবিধান বিচ্যুত অবৈধ পন্থায় অবৈধ শপথে অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া অবৈধ সংসদের অবৈধ কার্যক্রম এবং অবৈধ মন্ত্রিপরিষদের কোনো অন্যায্য আদেশ-নির্দেশ দেশের জনগণ মানতে বাধ্য নয়। এ কারণেই আওয়ামী লীগের গোটা শাসনামল দুর্নীতি, মহাহরিলুট, মহাসম্পদ পাচার ও মহামাফিয়া চক্র কবলিত।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেড় দশক ধরে দেশের ভোট বঞ্চিত মানুষের প্রাণ তড়পানো মৌলিক দাবি—নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠ নির্বাচন। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার লুটেরা পারিষদবর্গ সংবিধানের দোহায় দিয়ে একটির পর একটি বিনা ভোট, নিশি ভোট, ডামি নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করে দেশে জংলী আইনের শাসন কায়েম করেছে।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দলের কর্মসূচি
দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশজুড়ে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা, শুক্রবার বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ ও পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতা ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে পোস্টার ও পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। দলের অঙ্গ, সহযোগী ও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করবে।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে।