গরু চুরি করে ভুরিভোজের ঘটনায় তিন নেতা-নেত্রী বহিষ্কার
জামালপুরের মাদারগঞ্জে কৃষকের গরু চুরি করে কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভুরিভোজের আয়োজনের ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
গত (১১ জানুয়ারি) শনিবার মাদারগঞ্জ উপজেলার জুনাইল রাইসিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য উপজেলার দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে ভুরিভোজের আয়োজন করেন মাদারগঞ্জের আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থবিষয়ক সম্পাদক লায়লা খাতুন ইতি। তবে ভোজের বিরিয়ানী রান্নার জন্য ১০ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে উপজেলার জোরখালী ইউনিয়নের খামারমাগুরা গ্রামের কৃষক এফাজ মণ্ডলের গোয়ালঘর থেকে একটি গরু চুরি করে জবাই করার অভিযোগ উঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। গভীর রাতে গরু জবাই করার মতো কাউকে না পেয়ে সুমন মণ্ডল (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫) ও কয়েকজন কর্মীর সহায়তায় মুক্তা চৌধুরী নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে ওই গরুর মাংস দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের জন্য বিরিয়ানি রান্না করা হয় এবং কিছু মাংস রেখে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের সহায়তায় গরুর চামড়াসহ একই এলাকার কসাই বজলু প্রামাণিককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন কৃষক এফাজ মণ্ডল। বিষয়টি জানাজানি হলে মুক্তা চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী লায়লা খাতুন ইতি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কর্মী সুমন মণ্ডল ও কসাই বজলু প্রামাণিককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় গরুর চামড়া ও ২০ কেজি মাংস জব্দ করা হয়।
এই ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ পেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমসহ বিভিন্নভাবে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি ও সাত দিনের মধ্যে বক্তব্য দিতে নির্দেশ দেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের বাবুল খান। তবে ১২ জানুয়ারি রোববার দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দলের প্রথামিক সদস্যপদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষতির এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত স্বেচ্ছাসেবক দল জামালপুর জেলা শাখার সদস্য রতন সরদারকেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি এবং সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ১১ জানুয়ারি শনিবার জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নুরুল মোমেন আকন্দ কাউসার ও সাধারণ সম্পাদক মো. মনোয়ারুল ইসলাম কর্নেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
এদিকে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরীর স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থবিষয়ক সম্পাদক লায়লা খাতুন ইতিকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে মহিলা দল জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সুলতানা বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এই ঘটনায় সুমন মণ্ডল (৪০), কসাই বজলু প্রামাণিক (৪৫), মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী (৪৮), মিঠু (৪০), জামিউল (৩৫), আব্দুল হাকিম (৩৫), রতন সরদার (৩৮), সুজন (৪০), বিজ্ঞ চৌধুরী (৪৫), সাজা (৫০), বাদল (৩২), ফতু মিয়ার (৪০) নামে ও অজ্ঞাত আরও সাত থেকে আটজনকে আসামি করে মাদারগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন কৃষক এফাজ মণ্ডল।