ক্রেডিট গ্যারান্টি ২ হাজার কোটি টাকার, ঋণ বিতরণ মাত্র ১৯২ কোটি!
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বলেছেন, ‘কুটির, ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য দুই হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম থাকা সত্ত্বেও সুবিধার আওতায় এ পর্যন্ত মাত্র ১৯২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যা হতাশাজনক।’
আজ শনিবার রাজধানীতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমই ঋণের সমস্যা ও সুযোগ’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাসের এ কথা বলেন।
আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, ‘এই ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের যথাযথ ব্যবহার সিএমএসএমইয়ের পুনরুজ্জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সিএমএসএমই খাতকে আমাদের অর্থনীতির ইঞ্জিন বলা হয় এবং সিএমএসএমই অর্থায়ন সেই ইঞ্জিনের জ্বালানি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও এই খাতে অর্থায়ন হতাশাজনক।’
নাসের আরও বলেন, ‘সিএমএসএমইগুলোর কাছে পৌঁছানোর জন্য, ব্যাংকগুলোকে এজেন্ট ব্যাংক তৈরি করার পরিবর্তে সারা দেশে আরও উপশাখা স্থাপনের কথা ভাবা উচিত। কারণ উপশাখা তৈরি করা অতিরিক্ত প্রশাসনিক খরচ কমাতে সহায়তা করে।’
নাসের বলেন বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এবং এই সময়ে যদি আমরা জোরপূর্বক সুদের হার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি, তাহলে তা মন্দার সৃষ্টি করতে পারে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাসের বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এই মুহূর্তে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে উৎপাদন ও সেবা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর গতানুগতিক ঋণ ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং ব্লকচেইন তৈরির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের ভাবার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ১৯টি ক্লাস্টার চিহ্নিত করেছে এবং নাসের এই ক্লাস্টারগুলোর অধীনে সিএমএসএমই ঋণ দেওয়ার জন্য সবগুলো ব্যাংককে অনুরোধ করেছেন।
পরে ডেপুটি গভর্নর নাসের বলেন, ‘একটি ডিজিটাল ব্যাংক (সিএমএসএমইতে বিশেষ গুরুত্ব) তৈরি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনায় রয়েছে।’
এ সময় ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির বিকাশে সিএমএসএমই সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু নীতিগত সহায়তা এবং আর্থিক সহায়তার অভাবে আমরা এই খাতটিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কখনও কখনও সিএমএসএমইকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনুভব করে।’
২০২২ সাল পর্যন্ত উদ্দীপকের ৭৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বা ১৪৭ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তবে এর বেশিরভাগই মাঝারি উদ্যোগে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের পরিচালক মো. জাকের হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের জেনারেল ম্যানেজার মো. নাজিম সাত্তার তার পৃথক মূল প্রবন্ধে তুলে ধরেন যে, সারা দেশে সাত দশমিক আট মিলিয়নেরও বেশি সিএমএসএমই রয়েছে। সিএমএসএমইগুলোর জন্য ঋণ নিশ্চিত করতে শুধু ব্যাংকগুলোই যথেষ্ট নয়। বরং এমএফআই, এনজিও ফাউন্ডেশন, কর্মসংস্থান ব্যাংক, বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশনের বিকল্প ক্ষমতা সিএমএসএমইগুলোর মধ্যে ঋণ বিতরণের জন্য ব্যবহার করা উচিত।