বাজেট
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বরাদ্দ কমে অর্ধেক!
এবারের বাজেটে (২০১৫-১৬ অর্থবছর) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ অর্ধেকেরও বেশি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এবারের বাজেটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে এক হাজার ২১৩ কোটি টাকা। আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে দুই হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। বাজেট প্রস্তাব ঘোষণায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আবারও ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বাজেট প্রস্তাব ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে সর্বমোট ১২ কোটি ৪৭ লাখ মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা চার কোটি ৫৭ লাখে উন্নীত হয়েছে। দেশের চার হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সারা দেশে স্থাপিত প্রায় ২৪৫টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কৃষি তথ্য ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং উচ্চশিক্ষার প্রসারের জন্য ১২৮টি উপজেলায় রিসোর্স সেন্টার স্থাপনের কাজ চলছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মিনি ল্যাপটপ হবে ডিজিটাল ডাক্তার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মোট ১৩ হাজার ৮৬১টি মিনি ল্যাপটপ প্রদানের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ টেলিমেডিসিন সেবা, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য ও স্বাস্থ্য শিক্ষার সুযোগ পাবেন।
এ ছাড়া দেশের ৬৪টি হাসপাতাল এবং ৪১৮টি উপজেলা হাসপাতালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।
বাজেট প্রস্তাব ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী বলেন, খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগে হাই-টেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি জেলায় তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২টি জেলায় আইটি ভিলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ইন্টারনেটসেবা বিষয়ে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, জনগণকে ইন্টারনেটের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সব জেলার ১০০৬টি ইউনিয়নে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হচ্ছে। এ ছাড়া, সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটসেবা প্রদানের জন্য ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আট হাজার ৫০০টি পোস্ট-ই-সেন্টার চালুর কার্যক্রম ২০১৭ সালের জুন মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে।
দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হয়ে শিগগিরই বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ২০০ জিবিপিএস হতে এক হাজার ৩০০ জিবিপিএসে উন্নীত করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালের মধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১) উৎক্ষেপণের স্লট নির্ধারণ ও চুক্তি সম্পাদনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, হাইটেক পার্ক বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে। এ কারণে হাইটেক পার্কের ডেভেলপারদের বিদ্যুৎ বিল এবং ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারীদের জোগানদার সেবার ক্ষেত্রে বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর মওকুফের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিবেশ সুরক্ষাকারী সৌর-বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের মহৎ উদ্যোগকে নীতিগত সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে IDCOL নিবন্ধিত সোলার প্যানেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের নিকট ৬০ অ্যাম্পিয়ার পর্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যাটারি উৎপাদনকারীদের মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব রাখা হয়েছে বাজেটে।
মোবাইল সিমকার্ডের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মোবাইল অপারেটরদের সিমকার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা এবং প্রতিস্থাপিত সিমকার্ডের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা শুল্ক কর ধার্য আছে। মোবাইল ফোন খাতের উত্তরোত্তর উন্নয়নের স্বার্থে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার সহজলভ্য করার লক্ষ্যে খাতের সার্বিক সুষম প্রবৃদ্ধির জন্য সিমকার্ড ইস্যু এবং প্রতিস্থাপিত সিমকার্ড উভয় ক্ষেত্রে ১০০ টাকা শুল্ক-কর ধার্য করার করা হয়েছে। মোবাইলের সিম বা রিমকার্ডের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ই-কমার্সের ক্ষেত্রে অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট প্রস্তাবে তিনি বলেন, অনলাইনে পণ্য এবং সেবা বিক্রয় বা সরবরাহ কার্যক্রম বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহত না থাকলেও এতে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) নেই। এ ধরনের কার্যক্রমকে মূসকের আওতায় আনার লক্ষ্যে ব্যাখ্যা নির্ধারণসহ ৪ শতাংশ হারে মূসক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যে প্রদত্ত শুল্ক ও করের রেয়াতি সুবিধা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তিতে ব্যবহার্য ক্যামেরার শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের প্রোগ্রামারদের সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তাঁদের উৎপাদিত সফটওয়্যারের ডেটাবেজ, অপারেটিং সিস্টেম ও ডেভেলপমেন্ট টুলস ব্যতীত অন্যান্য কাস্টমাইজড সফটওয়্যারের আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।