চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি, সর্বস্বান্ত পাবনার কৃষক
পাবনায় শীতকালীন সবজির আবাদ এবার চাষিদের আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় বর্তমানে বাজারে ফুলকপি, বেগুন, শিম, মূলাসহ অন্যান্য সবজির দাম তলানিতে পৌঁছেছে। ফলে চাষিরা তাঁদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের সুমন পারভেজের কৃষি কাজের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তিনি কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চাকরি না করে কৃষি আবাদে মনোযোগী হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে ৩০ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বেগুন, শিম, মূলার আবাদ করে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।
সুমন পারভেজের মতো কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফুলকপি, বেগুন, শিম, মূলা এখন বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র তিন থেকে পাঁচ টাকা কেজিতে। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২০০ টাকায়, যা তাদের উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম।
আওতাপাড়া হাটে কৃষক মোনতাজ উদ্দিন পাইকারি বিক্রির জন্য কপি নিয়ে এসে বিক্রি করতে পারেননি। ক্রেতার বড়ই অভাব।
কৃষিবিদ আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, বর্তমান সময়ে সার, বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক খরচ সবই বেড়ে গেছে। এক বিঘা জমিতে ফুলকপি, বেগুন বা শিম উৎপাদনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন যে দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে তাতে কৃষকরা যে শুধু ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তা নয়, তারা সর্বস্বান্ত হওয়ারও আশঙ্কায় আছেন।
আনিসুর রহমান মল্লিক আরও বলেন, সরকারিভাবে কৃষকদের মনিটরিং করে কোন ফসল উৎপাদন করলে কৃষক লাভবান হবেন, সেই পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তারা উপকৃত হবেন।
তিলকপুর গ্রামের কৃষক খায়রুল ইসলাম খলিফা তিন বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তিনি জানান, সার-কীটনাশক, সেচ আর শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ ব্যাপক। বেগুন মাঠ থেকে তুলে হাটে বিক্রি করে লোকসান হচ্ছে। আমরা এখন দেনাদার হয়ে যাচ্ছি।
রাশেদ মন্ডল নামের অপর এক কৃষক সিম আবাদ করে শ্রমিক খরচ তুলতে পারছেন না বলে জানান। এক টাকা কেজি দরে সিম কেউ কিনতে চায় না বলেও জানান তিনি।
পাবনা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর পাবনা জেলার নয়টি উপজেলায় ১৬ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ করা হয়েছে। তাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সবজি উৎপাদিত হয়েছে, এতে বাজারে সরবরাহ অতিরিক্ত হয়ে গেছে।
পাবনা কৃষি খামার বাড়ির উপপরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, বাজার সংযোগের মাধ্যমে কৃষকদের সংযুক্ত করতে এবং ব্যাক হাউসে সবজি সংরক্ষণ করে বিদেশে রপ্তানি করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন বলে জানান।