মধ্যরাতে ছাত্রলীগ নেত্রীকে ডেকে নিয়ে মারধরের অভিযোগ
মধ্যরাতে ফোন করে ডেকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এক নেত্রীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির অপর দুই সিনিয়র নেত্রীর বিরুদ্ধে।
গত সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার ভুক্তভোগী রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ফাল্গুনী দাস তন্বী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি এবং শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেসমিন শান্তাকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন ফাল্গুনী দাস তন্বী।
এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জেসমিন শান্তা ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেলকে মারধর করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, তিনজনই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী। ফাল্গুনী দাস তন্বী ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও তার ওঠাবসা আছে। এটা দেখে ক্ষুব্ধ হন বেনজির হোসেন নিশি ও জেসমিন শান্তা। এর মধ্যে গত সোমবার তারা দুজন রাত ১২টার দিকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে তন্বীকে মারধর করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও দায়িত্বরত পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেত্রী ফাল্গুনী দাস তন্বী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেনজির হোসেন নিশি ও জেসমিন শান্তা রাত ১২টার দিকে আমাকে ফোন করে। তারা আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে যেতে বলে। আমি সেখানে গেলে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে তারা আমাকে মারার জন্য এলে আমি সেখান থেকে দৌড় দেই। তখন তারা আমাকে ধাওয়া করে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে ধরে ফেলে। এবং আমাকে উপর্যুপরি মারতে থাকে।’
‘এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা দুটি ছেলে আমি যেন না পালাতে পারি এজন্য আমাকে ঘিরে রাখে। একপর্যায়ে আমি মাটিতে পড়ে গেলে শান্তা আমার পায়ে জোরে চাপ দিয়ে ধরে রাখে। আর নিশি আমাকে এক পা দিয়ে চাপা দিয়ে অন্য পায়ে এলোপাতাড়ি লাথি দিতে থাকে। আমার গলায় পা দিয়ে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে আমার গলা দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও দায়িত্বরত পুলিশ আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। আমি প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। এখন পর্যন্ত আমি শক্ত কিছু খেতে পারছি না। আমার মুখ খামচে দেয়। রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় আমার হাত, পা ও মাথায় আঘাত লাগে’, যোগ করেন তন্বী।
হত্যার জন্যই মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তন্বী। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিলে তিনি আইনি ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি বলেন, ‘তন্বী বেয়াদবি করায় আমরা শাসন করেছি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে আমরা সমাধান করেছি।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘তিনজনের মধ্যে আগে থেকেই ঝামেলা ছিল। কিন্তু মারামারি করেছে সেটা জানতে পারিনি। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী আজ বুধবার সকালে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তার মধ্যে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। প্রক্টরিয়াল টিম তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।’
এর আগে সাত কলেজ অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনের সময় একাধিক আন্দোলনকারীকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে বেনজির হোসেন নিশি ও জেসমিন শান্তার বিরুদ্ধে।