রণবীর আমাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে : আনুশকা শর্মা
বিরাট কোহলি আর আনুশকা শর্মার সম্পর্ক এ মুহূর্তে নিঃসেন্দহে ভারতীয় গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। আনুশকা প্রযোজিত প্রথম ছবির সাফল্যের পেছনে এই সম্পর্কের অবদান কেমন রয়েছে, তা বোদ্ধা মহল ভালো বলতে পারবে। এরইমধ্যে মাসখানেক পর মুক্তি পেতে যাচ্ছে রণবীর কাপুর-আনুশকা শর্মার বহুল প্রতীক্ষিত ‘বোম্বে ভেলভেট’। অনুরাগ কশ্যপের এই ছবি নিয়ে বলিউডের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফিল্মফেয়ারের সাথে বিস্তারিত কথা হয়েছে আনুশকার।
প্রশ্ন : করণ জোহর সম্প্রতি বলেছেন যে ‘বোম্বে ভেলভেট’-এর শুটিংয়ের সময় তিনি এও জানতেন না যে ক্যামেরা কোথায় রাখা আছে! এটা কি ঠিক?
উত্তর : হ্যাঁ। এটা আপনার জানার কোনো সুযোগ নেই, আর সে (অনুরাগ) আপনাকে মোটেও বলবে না। আর কিছুক্ষণ পর আপনারও ব্যাপারটা বিশেষ গায়ে লাগবে না। যেমন ধরুন রাজু স্যার (রাজকুমার হিরানি) আপনাকে অন্তত এটুকু বলবেন যে এটা হলো ক্যামেরা, এটা হলো ইমোশন কিংবা আমি এই জায়গা থেকে ক্যামেরাটা ধরব। কশ্যপের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। এখানে সেটটাই নাটকীয়। এই নাটকের ব্যাপারটা এমন যে আপনি যেন একটা খালি রুমে ঢুকে পড়লেন। এটা একদম একান্ত আর বাস্তব, আপনি ক্যামেরাম্যানকে মোটেও দেখতে পাবেন না- সে অবশ্য বেশ ঠাণ্ডা মেজাজের লোক! এই পুরো ঢংটার সাথে আপনি কিছু সময় বাদে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন।
প্রশ্ন : আপনার ঠোঁটের পরিবর্তনের সাথে এই ছবির সম্পর্কটা আছে?
উত্তর : আমি ভাবতেও পারিনি যে এই ব্যাপারটা এত বড় একটি ইস্যুতে মোড় নেবে। কিন্তু এমনটাই হয়েছিল। মানুষজন এমন করে বলতে শুরু করল যে তুমি হ্যান করেছ, ত্যান করেছ...আর আমি বলার চেষ্টা করছিলাম- আরে ভাই আমার কথাটাও তো শুনুন! আমি বুঝতেই পারছিলাম না যে মানুষ কেন এভাবে আর এতটা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে! কিন্তু তারপর বুঝতে পারলাম যে কেন...
প্রশ্ন : টুইটারে নিজের মনের কথা জানানোটা কি ভালো সিদ্ধান্ত ছিল?
উত্তর : হ্যাঁ ছিল। না হলে অতিরিক্ত অনুমান আর কল্পনার সুযোগটা আরো বাড়িয়ে দেওয়া হতো। এটা লুকোবার কী আছে? আমি জানতাম যে মানুষজন এটা ঠিকই টের পাবে। আমি মোটেও এমনটা ভেবে বসে থাকিনি যে কেউ এটা আন্দাজই করতে পারবে না! যাহোক, মানসিক শান্তির জন্য পুরো ব্যাপারটা শেষ করা আমার জন্য জরুরি হয়ে পড়েছিল। যদিও আমি মনে করি না যে আমার কাউকে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার রয়েছে। এরপর যে যা ইচ্ছা বলুক, সেটা শুনতে আমার বয়েই গেছে! মানুষের যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। একবার আপনি যদি একটা বুদ্ধিদীপ্ত জবাব দিয়ে দেন আর সেটা যদি তারা বুঝতে পারে- তখন সব ধরনের কটূক্তি বা তাচ্ছিল্য বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশ্ন : বোম্বে ভেলভেটে রণবীর কাপুরের সাথে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
উত্তর : ওর সাথে কাজ করা খুবই সহজ, কারণ ও এমনিতেই আমার বন্ধু । এমনিতে ও আমাকে খ্যাপায়, সেটা আমার জন্য কোনো বিষয় না- কিন্তু সেটে এই খ্যাপানোটা আমি মোটেই পছন্দ করি না। আমার এমনকি কথা বলতেও একদম ভালো লাগে না। আমি চুপচাপ এক কোনায় বসে থাকি। তো এ অবস্থা দেখে ওর মনে হলো যে আমাকে হাসানো জরুরি ভিত্তিতে দরকার! এদিকে ওর ফুর্তিবাজ মুডটা তো আমি একদমই নিতে পারছি না, কারণ আমার তখন একটা শট দিতে হবে (হাসি)। এমন অবস্থা হলো যে আমি এক কোনায় গিয়ে কাঁদতে শুরু করলাম। তখন ও আমার কাছে এসে বলল, ‘আমি সত্যি বলছি তোমাকে আর জ্বালাব না।’ আমরা এমনিতে এ রকম হাসিঠাট্টা তো করি, কিন্তু ওই সময়ে সেটা চাচ্ছিলাম না। আমি চাচ্ছিলাম যে ও কিচিরমিচির করা আর হাসিঠাট্টাটা থামাক! ওকে যে গিয়ে পেটাবো তারও তো উপায় নেই, ওর সাথেই তখন একটা রোমান্টিক দৃশ্য শুট করার কথা আমার। তো ওকে থামাতেও পারছি না, মারতেও পারছি না- ও আমাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে। সে যাই হোক, শিল্পী রণবীরের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা। ওর আসলে অভিনয়ের জন্য তেমন প্রস্তুতি বা চিন্তাভাবনাও করতে হয় না। ওর সিনেমা বাছাই খুব ভালো। একই সাথে, ও যেভাবে স্টারডম ব্যবহার করে সেটাও দারুণ। আশা করি ওর যাত্রা অব্যাহত থাকবে আর ওর বংশটাও লম্বা চওড়া হবে! ইতিহাস তৈরি করার ক্ষমতা ওর মধ্যে আছে।
প্রশ্ন : ছবিতে তো চুমুর দৃশ্য আছে। ওটা ‘সামলেছেন’ কিভাবে?
উত্তর : এটা কোনো ব্যাপারই না। আমাদের দুজনেই ব্যক্তিগত জীবনে মজবুত সম্পর্কে জড়িত আছি, আমরা অভিনয়শিল্পী হিসেবেও ভালো অবস্থায় আছি। আমরা মোটেও অর্থহীন কোনো ছবিতে অভিনয় করছি না, আর কেবল দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও কোনো দৃশ্যে কাজ করছি না। আমরা কাজ করছি অনুরাগ কশ্যপের ছবিতে, কাজেই যা হচ্ছে দরকারেই হচ্ছে!
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবনের ‘সম্পর্ক’ কি কোনো সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে?
উত্তর : না। এই ছবি দেখলে বুঝবেন যে ছবির মধ্যকার মানুষগুলো একদম বাস্তব। আমাদের এমনটাই হওয়া দরকার ছিল, তাই হয়েছে। ভেবে দেখুন কিভাবে ছবিটা ভালো করা যায়! আমরা চেয়েছিলাম যে বোম্বে ভেলভেটে চুমুর দৃশ্যগুলো যেন একদম সহজাত মনে হয়, ওতে যে কোনো ‘চেষ্টা’ আছে সেটা যেন না বোঝা যায়। আমি আর রণবীর একই নজরে আমাদের চরিত্র মেপেছি। রোজি আর বলরাজের সম্পর্ক, ওদের আবেগ আর টান একদম জলজ্যান্ত! ব্যাপারটা এমন ছিল, ঠিক যেন প্রেমিকের সাথেই চলা। এ জন্যই ছবিটা করতে গিয়ে আমি ভয় পেয়েছিলাম। তবে রণবীর ছিল, তাই ভয়টা সহজেই কেটে গেছে। কারণ আমি জানি যে রণবীর শুধু নিজের চরিত্রের কথা ভাবে, দুনিয়ার আর কিচ্ছু তার মাথায় আসে না তখন। অনুরাগ, আমি আর রণবীর; আমরা তিনজনেই একটা ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম- ‘চল, দারুণ একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলি!’