জাজের আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘শিকারি’ ছবিটি মুক্তি পায় এবারের ঈদুল ফিতরে। ছবিটির পোস্টারে ভারতীয় পরিচালকের পাশাপাশি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পরিচালকের নাম ছিল জাকির হোসেন সীমান্তের। কিন্তু সিনেমা হলগুলোতে সরবরাহ করা ব্যানারে পরিচালক হিসেবে নাম লেখা ছিল আবদুল আজিজের।
একই ছবিতে দুজন পরিচালকের নাম ব্যবহার করা নিয়ে তখনই প্রশ্ন ওঠে। তাই বিষয়টি নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। অবশ্য সমিতির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে জাকির হোসেন সীমান্তকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজের সদস্যপদও বাতিল করে দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়েছে সমিতি থেকে।
পরিচালক জাকির হোসেন সীমান্তের সদস্যপদ বাতিলের বিষয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য পরিচালক বদিউল আলম খোকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পরিচালক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী আমাদের দেশে একটি ছবি রিলিজ হওয়ার পর যৌথ প্রযোজনার ছবি পরিচালনা করতে পারেন একজন পরিচালক। কিন্তু সীমান্ত বাংলাদেশে কোনো ছবি নির্মাণ করেননি। এমনকি যৌথ প্রযোজনার ছবিতে পরিচালনা করার জন্য সমিতি থেকে অনুমোদন নিতে হয়। সেটাও তিনি নেননি। ‘শিকারি’ ছবিতে পরিচালক হিসেবে নাম নিবন্ধন করানো হয় আব্দুল আজিজের।’
চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সমিতির নিয়ম অনুযায়ী একজন পরিচালককে এমএ পাস করতে হয়। বদিউল আলম খোকন জানান সীমান্তের সেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। খোকন বলেন, ‘এসব বিষয়ে সীমান্তকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে। কিন্তু তিনি এর কোনো উত্তর দেননি। সে কারণেই তাঁকে আজীবন নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমিতি। যতদিন পরিচালক সমিতি আছে, ততদিন তিনি কোনো ছবি পরিচালনা করতে পারবেন না।’
আবদুল আজিজের সদস্যপদের বিষয়ে খোকন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজের সদস্যপদ রাখা হবে কি না, সে বিষয়ে আগামী শনিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরই মধ্যে আবদুল আজিজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। শনিবারের মধ্যে যদি তিনি এই নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারেন, তা হলে রোববার সমিতি থেকে উনার সদস্যপদ বাতিল করা হবে। এবং এরপর থেকে উনি আর কোনো ছবিতে পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না।’
আবদুল আজিজের সদস্যপদ প্রাপ্তির বিষয়ে খোকন বলেন, ‘আমাদের আগের কমিটি আবদুল আজিজকে পরিচালক সমিতির সদস্যপদ দিয়েছিল। তখন সমিতির সকল নিয়ম মেনে তিনি কাজ করবেন এই অঙ্গীকার দিয়েই সদস্যপদ নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নিজের নামে পরিচালক সমিতিতে নতুন চলচ্চিত্রের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন কিন্তু ছবি মুক্তির সময় আরেকজন পরিচালকের নাম বসিয়ে দেন। এতে করে চলচ্চিত্র পরিচালকদের যেমন অবমূল্যায়ন করা হয়, তেমনি সমিতির নীতিমালাও ভঙ্গ করা হয়।’
বদিউল আলম খোকন আরো অভিযোগ করেন, ‘এটাই কিন্তু প্রথম নয়, এর আগেও এমন কাজ করেছেন আবদুল আজিজ। ‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ ছবি মুক্তির সময়ও এমন কাজ করেছিলেন তিনি। সেই ছবির সময় তিনি ছবির পরিচালক হিসেবে ‘আজিজ মোহ’ নাম লিখেছিলেন। আমরা অনেক খুঁজেও পাচ্ছিলাম না কে এই ‘আজিজ মোহ’। আমাদের পরিচালক সমিতিতে এমন কোনো পরিচালকের নাম অন্তর্ভুক্ত নেই। পরে খবর নিয়ে জানতে পারলাম, মোহ হচ্ছে আবদুল আজিজের মেয়ের নাম। এখন কথা হচ্ছে আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে চলচ্চিত্র কে পরিচালনা করবেন, সেই সিদ্ধান্ত আপনি নিতে পারেন। কিন্তু সেই পরিচালক ছবি বানানোর উপযুক্ত কি না সে সিদ্ধান্ত নেবে পরিচালক সমিতি। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা প্রযোজকের নেই। পরিচালক সমিতি বা ছবি পরিচালনা কোনো সবজির দোকান নয় যে যাকে ইচ্ছা দোকানে বসিয়ে দিলাম।’