কেবল ৬ মিনিটে কাটবে ফোনের নেশা, শুধু...
বর্তমান সময়ে মোবাইলের নেশায় বুঁদ হচ্ছেন সকলেই। তবে এই নেশা আজ আর অভ্যাসের মধ্যে নেই। চিকিৎসকদের কথায়, এটি বদ অভ্যাসের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কিন্তু উপায়ান্তরই বা কোথায়! সিনেমা ও নাটক থেকে শুরু করে সবই করা হয় এই ফোনের মাধ্যমে। এখন প্রশ্ন হলো-তা হলে ফোন থেকে নজর ঘুরবে কী করে?
ফোনে আসক্তি বা ডিজিটাল আসক্তি থেকে শরীর এবং মেধার ক্ষতি হচ্ছে, তেমনই আবার কাজের প্রতিও মনোযোগ কমছে। মোবাইলের দুনিয়া কেড়ে নিচ্ছে সরাসরি সম্মুখ আলাপ, আড্ডার অবসর। বিভিন্ন গবেষণায় তো বটেই, চিকিৎসকরাও মোবাইল আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অথচ ডিজিটাল সমাজের লাগাম হাতে রেখেও কীভাবে আসক্তির বিপদ হতে মুক্তি হবে, তা জানা যায়নি।
ব্রুকলিনের এক ‘বেস্টসেলিং’ লেখিকা লিজ মুডি অবশ্য বলছেন, সমাধান মিলেছে। একটি গবেষণাতেই উঠে এসেছে সেই ‘কার্যকরী’ উপায়। যার সাহায্যে মাত্র ছয় মিনিটেই মুক্তি পাওয়া যাবে মোবাইলের আসক্তি থেকে।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দু’টি বেস্টসেলিং বইয়ের লেখিকা লিজ। আবার তাঁর নিজস্ব পডকাস্টের চ্যানেলও আছে। সেই চ্যানেলেই লিজ় বিস্তারিত জানিয়েছেন ওই গবেষণার ব্যাপারে।
লিজ বলেছেন, ‘একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কেবল ছয় মিনিট বই পড়লেই আমাদের মানসিক চাপ ৬৮ শতাংশ কমে যায়। শুধু তা-ই নয়, গবেষণায় বলা হয়েছে যে, পড়ার অভ্যাস মনকে হালকা করার পাশাপাশি মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।’
লিজের মতে, স্মার্ট ফোন আসার আগে বই পড়ার অভ্য়াস ছিল। কিন্তু ইদানীং সেই অভ্যাস অধিকাংশই ভুলতে বসেছেন। গবেষণার কথা মেনে দিনের একটা সময় ফোন থেকে ছয় মিনিটের জন্য চোখ সরালে চাপমুক্তির পাশাপাশি আরও একটা ভাল কাজ হবে।
লিজ বলছেন, ‘বই পড়ার অভ্যাস করলে আমাদের ফোনে মগ্ন হয়ে থাকার বদ অভ্যাসেও ছেদ পড়বে। মন একমুখী, বা বলা ভাল ফোনমুখী না হয়ে অন্য পথে চালিত হবে। আর কে বলতে পারে, মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি পড়ার অভ্যাস হয়তো আমাদের মোবাইল আসক্তিকেও দূর করবে!’
লিজ যে গবেষণার কথা বলছেন, সেই গবেষণা করা হয়েছিল সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাইন্ডল্যাব ইন্টারন্যাশনালের গবেষকরা কগনিটিভ নিউরোসাইকোলজিস্ট চিকিৎসক ডেভিড লুইয়ের নেতৃত্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করেন। পরে সেই গবেষণা বিজ্ঞান বিষয়ক পত্র-পত্রিকার পাশাপাশি বহু আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়।
গবেষণাটি প্রসঙ্গে ডেভিড অবশ্য বলেছিলেন, ‘বই পড়লে যে আমাদের মন অন্য পথে চালিত হয়, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই। তবে তার চেয়েও বড় বিষয় হল, সাদা পাতায় ছাপার অক্ষরগুলো আমাদের কল্পনাশক্তির সঙ্গে জুড়ে আমাদের মধ্যে থাকা সৃষ্টিশীলতাকেও জাগিয়ে তুলতে পারে।’
লিজ ও লুই দু’জনের সঙ্গেই সহমত পোষণ করেছেন ভারতীয় নিউরোলজিস্ট রবি কুমারও। ছাপার অক্ষরের উপর তাঁরও অগাধ আস্থা। তিনি আবার বলছেন, ‘বই পড়ার অভ্যাস মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। চিন্তাশক্তিও উন্নত করে।’’
কুমারের মতে, প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক বিকাশের জন্যও ভাল। সেক্ষেত্রে কেউ যদি প্রতিদিনের রুটিনে সামান্য সময়ের জন্যও বই পড়ার অভ্যাস রাখেন, তবে তা তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য মোবাইল নির্ভরতাও কমাবে।
চিকিৎসক কুমার জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত বই পড়ার অভ্যাস থাকলে তা মেধাশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে।