শীতে ওজন বেড়ে যাচ্ছে? জেনে নিন কারণ ও সমাধান
শীতের আমেজ যতই বাড়তে থাকে, ঘরে থাকার লোভটা যেন ততই জেঁকে বসে। একই সঙ্গে মুখরোচক মৌসুমি খাবারগুলো এড়ানোটা রীতিমত দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। ঋতুর এই পালাবদলে চিরায়ত নিয়মেই সারা শরীর জুড়ে ভর করে আড়ষ্টতা।
এই প্রবণতা প্রকোট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরুৎসাহ চলে আসে শরীর চর্চার প্রতি। অপরদিকে জিভে জল আনা খাবারের লোভ সামলাতে না পারায় সঙ্গত কারণেই বিপত্তি ঘটে শরীরের ওজন নিয়ে। বসন্ত পেরিয়ে গরম আসার আগেই বেজায় ভারী হয়ে ওঠে সারা শরীর। প্রতি শীতে এভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে কেন এতটা ঝামেলা পোহাতে হয়? এ থেকে মুক্তিই বা কিসে! চলুন, শীতকালে শরীরের ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধে কার্যকরি উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
শীতে কেন ওজন কমানো কঠিন
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো সৃষ্টি হয় পরিবেশগত, মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক দিক থেকে সামগ্রিকভাবে। পৃথকভাবে এই প্রভাব বিভক্ত করা হলে নিম্নোক্ত কারণগুলোর অবতারণা ঘটে।
শরীর চর্চার ঘাটতি
দিন ছোট হয়ে আসা এবং শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য আবদ্ধ জায়গায় থাকার প্রবণতা বাড়তে থাকে। খোলা জায়গায় জগিং, দৌড়ানো এবং খেলাধুলা তো বন্ধ হয়ই, এমনকি অন্যান্য সময়ের মতো হালকা পায়চারির জন্যও কেউ ঘরের বাইরে বেরতে চান না। ঘরে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার দরুণ দেহের স্থিতিশীলতা শীতের প্রাকৃতিক জড়তাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে করে শরীরের পেশীগুলোর সঙ্কোচন-প্রসারণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে। এই পরিবর্তন প্রতিদিনের ক্যালোরি ব্যয়কে কমিয়ে দিয়ে শরীরের স্বাভাবিক বিপাকে অবনতি ঘটায়। এভাবে সপ্তাহ কিংবা মাসব্যাপি চলতে থাকলে দেহ ক্রমশ ওজন বৃদ্ধির দিকে ধাবিত হয়।
অতিরিক্ত আহার
অন্যান্য মৌসুমের ন্যায় শীতের মাসগুলোতেও পাওয়া যায় নতুন সবজি, ফল ও অন্যান্য মুখরোচক খাবার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও শর্করা সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো তৃপ্তির সঙ্গে তাৎক্ষণিক উষ্ণতা দেয়। তাই এগুলো শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য সহায়ক। তবে ক্রমাগত আহারের ফলে শরীরে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ বেড়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন তার থেকেও উদ্বৃত্ত থাকে ক্যালোরির পরিমাণ। যথা সময়ে নির্গত না হলে এই ক্যালোরি শরীরে মেদ সৃষ্টিতে অংশ নেয়।
এমনকি পুষ্টিকর খাবারগুলোও অতিরিক্ত খাওয়া হলে পুষ্টির ভারসাম্য ব্যাহত হয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বেড়ে যায়। একদিকে শীতের জড়তা, তারপর দেহের নড়াচড়া কমিয়ে দেওয়ার সঙ্গে আবার অতি আহার যুক্ত হয়ে সুস্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
সূর্যালোকের স্বল্পতা
শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতা থাকে শীতের মৌসুমে। কেননা অধিকাংশ দিনগুলোতে কুয়াশার কারণে সূর্যালোকের দেখা পাওয়া যায় না। দেহের হাড়ের গঠন, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন ডি অপরিহার্য। সেখানে শীতকালের অভাবে ক্লান্তি ও হতাশার অনুভূতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে যেগুলো সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (এসএডি)-এর সাধারণ লক্ষণ।
এসএডি কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়, যা সাময়িকভাবে দেহে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটে, তবে অতিরিক্ত মাত্রা বিরামহীন ভক্ষণ ও অলসতার একটি চক্র তৈরি করে, যা ভেঙে বের হওয়া কঠিন।
মেটাবলিজমের পরিবর্তন
মানবদেহের বিপাক প্রক্রিয়া প্রকৃতিগতভাবেই ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। ঠাণ্ডা তাপমাত্রা শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রেখে বিপাকীয় হারে সামান্য বৃদ্ধি ঘটায়। কিন্তু যখন শীতকালীন খাবার অতিমাত্রায় গ্রহণ করা হয় তখন এই বিপাক প্রক্রিয়া ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে শরীর একটি হালকা ‘হাইবারনেশন মুডে’ প্রবেশ করতে পারে। এ অবস্থায় শক্তি ব্যবহার না করে বিপাকের গতিকে কিছুটা কমিয়ে দেয়। এর সঙ্গে বাহ্যিকভাবে যখন শরীরের পেশীগুলোর স্থবিরতা যুক্ত হয়, তখন তা দেহকে স্থুলতার দিকে পরিচালিত করে।
মানসিক চাপে আহারের প্রবণতা
মেজাজ ও দেহের অভ্যন্তরে সঞ্চিত শক্তির উপর ঋতুগত প্রভাবের কারণে ‘ইমোশোনাল ইটিং’ বা ‘স্ট্রেস ইটিং’-এর প্রবণতা তীব্র হয়। ফলে ব্যক্তি মানসিক চাপ থেকে বাঁচতে ঘন ঘন আহার করতে উদ্যত হন। অনেকের মাঝেই শীতল আবহাওয়া বিষন্নতার উদ্রেক ঘটায়। এর সঙ্গে বাহ্যিক প্রভাবক যেমন একাকীত্ব বা একঘেয়েমির অনুভূতি যুক্ত হলে তা মানসিক চাপে রূপ নেয়। এ সময় আহারের জন্য তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অধিক ক্যালোরি সমৃদ্ধ মুখরোচক খাবারগুলোকেই বেছে নেন। এগুলো তাৎক্ষণিকভাবে উষ্ণতা ও তৃপ্তির একটি অস্থায়ী অনুভূতি দেয়। কিন্তু এই আচরণের পুনরাবৃত্তি পরবর্তীতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
শীতকালে ওজন বৃদ্ধি এড়ানোর কার্যকরি সমাধান
উপরোক্ত অসুবিধাগুলোর কারণে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য হলেও তা অসম্ভব নয়। আশার কথা হচ্ছে- উষ্ণ মৌসুমে যে কোনো অভ্যাস গড়ে তোলার সময়ে অল্পতেই প্রচণ্ড ক্লান্তি চলে আসে। কিন্তু শীতে এই সমস্যা নেই, বরং এ সময় অল্প শ্রমেই পাওয়া উষ্ণতা আরও বেশি কায়িক শ্রমের খোরাক যোগায়। এই উদ্দীপনাকে পুজি করে নিম্নলিখিত কৌশলগুলো অবলম্বন করা হলে ওজন বৃদ্ধি এড়ানোর কঠিন পথটা সহজ হয়ে আসবে।
ঘরে থাকার সময়গুলো কর্মচঞ্চল রাখা
প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে স্বাভাবিক ভাবে ঘরের বাইরে আনাগোণাটা কমে আসে। তাই ঘরের ভেতরে থাকার মুহুর্তগুলো দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া অব্যাহত রাখার দিকে মনযোগ দিতে হবে। বর্তমানে অনলাইন থেকেই ওয়ার্কআউট ভিডিওগুলোর মাধ্যমে হোম জিম সেট-আপ করা যায়। খুব বেশি আয়োজনের দিকে যেতে না চাইলে যোগব্যায়াম বা পাইলেটেস-এর মত ব্যায়ামগুলো যথেষ্ট উপযোগী।
রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং এবং কার্ডিও এক্সারসাইজ সমৃদ্ধ ওয়ার্কআউটগুলো ক্যালোরি পোড়ানো এবং একই সঙ্গে ঘরের ভেতরে ব্যায়ামের জন্য উৎকৃষ্ট। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড, কেটলবেল, লাঞ্জ এবং পুশ-আপ।
ঘরে থাকার মুহুর্তগুলোতে শরীরের পেশী সচল রাখার জন্য ব্যায়ামই একমাত্র উপায় নয়। আরও একটি কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে ঘর গোছানো। প্রায় সময় দেখা যায় সারা বছর ধরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘর পরিপাটি রাখার দিকেই নজর দেওয়া হয় না। এর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হতে পারে এই শীতকাল।
এই কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে রিডিং বা কম্পিউটার টেবিল গোছানো, বইয়ের তাক ছোট করে আনা, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলা, এবং বহু দিনের জমে থাকা ময়লা যেমন স্টোর রুম পরিষ্কার প্রভৃতি। সিলিং-এর ঝুল, ফ্যান, টয়লেট, এবং আসবাব পরিষ্কারের মত নিত্য-নৈমিত্তিক কাজগুলোও করা যেতে পারে। এই উৎপাদনশীল ক্রিয়াকলাপ কর্মচঞ্চলতার মাধ্যমে উষ্ণতার যোগান দেয় এবং বাধাধরা ব্যায়াম ছাড়াই দেহের ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয়, এই কাজগুলো অযথা দুশ্চিন্তা থেকে মনকে অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট কার্যকর। উপরন্তু, বসবাসের ঘরটি সুসংগঠিত ও বিশৃঙ্খলামুক্ত হলে তা মনস্তত্ত্বের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ঘরের বাইরে শরীর চর্চা
উন্মুক্ত পরিবেশে শরীর চর্চার কোনও বিকল্প নেই। নিদেনপক্ষে আবহাওয়া একটু সহনীয় হয়ে এলে ঘরের বাইরের শারীরিক অনুশীলনগুলো শুরু করা উচিত। যারা নিয়মিত শরীর চর্চায় অভ্যস্ত তাদের জন্য দুয়েক সপ্তাহের গ্যাপ সামগ্রিক ভাবে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রয়োজনে অন্যান্য মৌসুমগুলোর তুলনায় শরীর চর্চার সময়টা কিছু কমিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে ব্যায়াম না করে আবহাওয়া বুঝে ভিন্ন ভিন্ন সময় বেছে নেওয়া যায়।
প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি গুরুত্বারোপ
শীতের মৌসুমি খাবারগুলো উপভোগের জন্য প্রোটিন ও ফাইবার পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবারগুলো সর্বোত্তম। প্রোটিন পেশী রক্ষণাবেক্ষণ, বিপাক এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। আর ফাইবার স্বল্পাহারেই পাকস্থলির পূর্ণতা বৃদ্ধি ও হজমে সহায়তা করে ঘন ঘন খাওয়ার উন্মাদনা কমায়। এছাড়াও এ ধরণের খাবার মশলা বা উচ্চ-চর্বিযুক্ত উপাদানগুলোর প্রয়োজন ছাড়াই আলাদা স্বাদ যোগ করতে পারে।
যেমন মিষ্টি আলু, গাজর, শালগম এবং পালং শাকের মত হাল্কা খাবারগুলো রাখা যেতে পারে লাঞ্চ ও ডিনারে। এগুলোর সঙ্গে চর্বিহীন প্রোটিন ও কম সোডিয়াম সম্পন্ন স্যুপ অতিরিক্ত ক্যালোরি ছাড়াই উষ্ণতার যোগান দিবে। এছাড়া মটরশুটি, ডিম ও শিমের সমন্বয়ের মাধ্যমে ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হতে পারে।
স্ন্যাক হিসেবে চিনাবাদাম ও মাখনের মিশ্রণের সঙ্গে আপেল কুঁচি সহ দই একটি উৎকৃষ্ট বিকল্প। বেশি তেলযুক্ত ও মশলাদার খাবারগুলো এড়িয়ে চলাই উত্তম।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ
সূর্যালোকের অভাবে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণের জন্য কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো সব মৌসুমেই পাওয়া যায়। যেমন ফ্যাটযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম এবং ফোর্টিফাইড দুগ্ধজাত খাবার। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো রাখা শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির যোগানের জন্য যথেষ্ট। এই ভিটামিনের অভাব খুব বেশি খারাপের দিকে এগোলে অবশ্যই পরিপূরক বিকল্পের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
পানিশূন্যতা এড়িয়ে চলা
ঠান্ডায় ঘামের ঝামেলা না থাকলেও শরীরে পানির ভারসাম্য ধরে রাখা আবশ্যক। বিপাক সহ শরীরের আভ্যন্তরীণ প্রতিটি কার্যকলাপে একটি অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে পানি। অল্প মাত্রায় পানিশূন্যতাও কখনও কখনও অতি মাত্রায় ক্ষুধার উদ্রেক ঘটাতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা ছাড়াও এই সমস্যার একটি উপযুক্ত সমাধান হচ্ছে ভেষজ চা। এটি তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি দেহে আরামদায়ক উষ্ণতা সরবরাহ করে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিনির পরিমাণ কমাতে হবে।
প্রতিদিন ঘুমের নিয়ম ঠিক রাখা
ক্ষুধা ও ক্ষুধার সঙ্গে সম্পৃক্ত হরমোন নিয়ন্ত্রণে রুটিন মাফিক ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার সময় এবং ঘুম থেকে উঠার সময়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা রাখতে হবে। এমনকি মাঝের ঘুমের সময়টিও কখনও বেশি কখনও কম হওয়া উচিত নয়। অপর্যাপ্ত ঘুম মানেই মেজাজের ভারসাম্যহীনতা, যার রেশ ধরে আসে ক্লান্তি, বিষণ্নতা এবং কর্মবিমুখতা। এ সবকিছু পরিচালিত করে মানসিক চাপের দিকে, যে অবস্থায় অনেকেই অতিরিক্ত অস্বাস্থ্যকর এবং অতিরিক্ত আহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
অলসতা পরিহার ও স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য দিনে ঘুম পরিত্যাগ করতে হবে। সেই সঙ্গে ঘুমের বিছানাটিও হতে হবে সমতল। উচু-নিচু নরম বিছানা ঘুমের সময়কালীন শরীরের আভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া এমন বিছানায় ঘুম থেকে ওঠার পরেও শরীরের বিভিন্ন সন্ধিস্থলে ব্যথা অনুভূত হয়।
দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা
প্রচণ্ড মানসিক চাপের সময় দেহের ভেতর কর্টিসল নামক হরমোনের অধিক মাত্রায় নিঃসরণ ঘটে। ফলে অধিক চর্বি বা চিনিযুক্ত খাবারের জন্য প্রচণ্ড উন্মাদনা সৃষ্টি হয়। এই প্রভাবকে প্রশমিত করতে মেডিটেশন ও বাইরে অল্প হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়। আসলে নিয়মিত শরীর চর্চা শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর পাশাপাশি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণেরও একটি মোক্ষম হাতিয়ার।
তবে ব্যায়াম ছাড়াও দুশ্চিন্তা মুক্তির আরও কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। তন্মধ্যে ঘর গোছানোর বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রথম কৌশল পর্যালোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। আরেকটি ফলপ্রসূ পদক্ষেপ হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হওয়া।
স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র, খাদ্য ব্যাংক ও অনুদান সঙ্ঘগুলো প্রায়ই শীতের মাসগুলোতে বঞ্চিত নাগরিকদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। মৌসুমি ইভেন্টগুলোতে দাতব্য তহবিল সংগ্রহ, বিনামূল্যে মুদ্রি সামগ্রী ও রান্না করা খাবার বিতরণ, এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়। এগুলোতে শুধু অর্থ সাহায্য না দিয়ে সশরীরে অংশগ্রহণ করা যায়। এই সামাজিক কার্যকলাপ একই সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সমুন্নত রাখে।
দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখার আরও একটি আকর্ষণীয় উপায় হচ্ছে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণে যাওয়া। প্রতিটি ভ্রমণেই উদ্দিষ্ট গন্তব্যে যাতায়াত ও আবাসান সহ দর্শণীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়ানোতে পর্যাপ্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সংঘটিত হয়। যারা হাইকিং, রাফ্টিং, কায়াকিং, বা ট্রেকিং-এ যান তাদের অবশ্য শারীরিক ধকলটা একটু বেশিই হয়। তবে মনের যাবতীয় নৈরাশ্য দূরীকরণে এর থেকে উৎকৃষ্ট বিকল্প আর নেই। তাছাড়া প্রকৃতির সান্নিধ্যে যে কোনও অস্থির মন নিমেষেই শান্ত হয়ে যায়। সর্বপরি, স্থুলতা এড়িয়ে ফিটনেস ধরে রাখার ক্ষেত্রে ভ্রমণ হতে পারে নিশ্চয়তার মাপকাঠি।
শীতকালে শরীরের ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা কেন কঠিন সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকলে এর কার্যকরি কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। হিম শীতল আবহাওয়ার আড়ষ্টতা, মৌসুমি খাবার ও সূর্যালোকের স্বল্পতাই মূলত এখানে প্রধান নির্ধারক। এগুলোর পথ ধরে আসে মানসিক ও শারীরিক জীর্ণতা, যার বদৌলতে শরীর ধাবিত হয় স্থুলতার দিকে। এর বিপরীতে শরীর চর্চা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণে দৃঢ়চেতা হওয়া গেলে নেতিবাচক প্রভাবগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে। দেহকে সার্বক্ষণিক নড়াচড়ার মধ্যে রাখা জড়তা কাটানোর পাশাপাশি আরামদায়ক উষ্ণতা পাওয়ার জন্যও সহায়ক। আর মুখরোচক খাবারের স্বাদ নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখলে প্রাণ ভরে উপভোগ করা যাবে শীতের আমেজ।