রাশিয়াকে ‘সেনা অভিযান’ পেছাতে বলেছিল চীন?
ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘সেনা অভিযানের’ বিষয়ে আগেই জানত চীন? তারা কি রুশ কর্মকর্তাদের ‘সেনা অভিযান’ পরে শুরু করতে বলেছিল? বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের পরপরই ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের ঘটনায় এমন একটি ইঙ্গিত গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহল।
ধারণা করা হচ্ছে, বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিক গেমস পর্যন্ত ‘সেনা অভিযান’ না করতে রুশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিলেন চীনা কর্মকর্তারা। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের আগে রুশ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেখানে দুপক্ষ জানিয়েছিল—বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে পুনরুজ্জীবিত সম্পর্কের কোনো পরিসীমা নেই। এর পরেই বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক গেমস শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ইউক্রেনে আক্রমণ করে বসে রাশিয়া।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করছে চীন। তারা সরাসরি এ আক্রমণের নিন্দাও জানাচ্ছে না, আবার এর পক্ষেও কথা বলছে না। রুশ ‘সেনা অভিযানে’র নিন্দা জানানো নিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল চীন।
তবে, সম্প্রতি নিজেদের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশের বার্তা দিয়েছে চীন। দুই দেশের সংকটে মধ্যস্থতার জন্য দেশটি ভূমিকা পালনে প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
অন্যদিকে, শীতকালীন অলিম্পিকের পর পর্যন্ত ইউক্রেন আক্রমণ না করতে রাশিয়াকে চীনের আহ্বানের খবর প্রত্যাখ্যান করেছেন চীনা কর্মকর্তারা।
তবে, বিশেষজ্ঞেরা বলছেন—পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়—চীনা নেতারা জানতেন আক্রমণ হতে যাচ্ছে। এবং তা প্রকাশ হলে পাশ্চাত্যের কাছে চীনের সুনাম কলঙ্কিত হবে।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। পশ্চিমা গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন উল্লেখ করে পত্রিকাটি বলেছে, চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, তাঁরা যেন শীতকালীন অলিম্পিক গেমস শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনে আক্রমণ না করে। এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে শুরু হয় রাশিয়ার সেনা অভিযান।
গত বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়া এবং দোষ অন্যের কাঁধে দেওয়ার এ ধরনের চর্চা ঘৃণ্য। ইউক্রেন নিয়ে যে ঘটনা ঘটছে, তার সবটুকু খুব স্পষ্ট। বিষয়টির মূল কারণ সবারই জানা।’
ওয়াশিংটনে চীনের দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, ‘প্রতিবেদনটিতে যা দাবি করা হয়েছে, তা শুধুই অনুমান। এর কোনো ভিত্তি নেই। এর উদ্দেশ্য চীনকে দোষারোপ দেওয়া এবং কলঙ্কিত করা।’
ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টারের চীনা কর্মসূচির পরিচালক ইউন সান বলেন, ‘বিশ্বনেতারা খুব কম সময়েই আসন্ন যুদ্ধ নিয়ে একে-অপরকে আগে থেকে বলে থাকেন। তাই, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে তথ্য বিনিময় একটি বিশেষ সম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করে।’
সান আরও বলেন, ‘এ থেকে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের প্রকৃতি ও গভীরতা বোঝা যায়। আমরা চীনের কাছ থেকে আশা করতে পারি না যে, তারা গঠনমূলক উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে।’
এদিকে, রুশ আগ্রাসনের কঠোর সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জালিনা পোর্টার গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, মস্কোর সমর্থকেরা ‘ইতিহাসের ভুল দিকে’ থাকবে এবং ‘বিশ্ব লক্ষ্য রাখছে কোন দেশগুলো ইউক্রেনের পক্ষে রয়েছে।’
ট্রান্স-আটলান্টিক সহযোগিতা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ জার্মান মার্শাল ফান্ডের সিনিয়র ফেলো অ্যান্ড্রু স্মল বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে চীন। এ দুদেশ স্নায়ু যুদ্ধে ওয়াশিংটনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এক হয়েছে।’
স্মল বলেন, ‘চীন সম্ভবত আশা করেছিল যে, রাশিয়া ইউক্রেনে দ্রুত জয়লাভ করবে, যেমনটি অতীতের যুদ্ধগুলোতে তারা করেছে।’