প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার জিয়া পরিবার : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান ব্যর্থ, দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই প্রতিহিংসার পরায়ণ রাজনীতির শিকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।’
আজ শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব অভিযোগ করেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জেনেছেন, গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান এবং তাঁর স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। এই প্রসিডিংস ফরমায়েশি এবং প্রতিহিংসামূলক। ১/১১ জরুরি অবস্থার অনৈতিক সরকার দেশকে বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্যে মাইনাস টু ফর্মূলাসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাদের মিশন সফল করতে চেয়েছিল। সে সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকা সত্ত্বেও শুধু তারেক রহমানের স্ত্রী এবং জিয়া পরিবারের সদস্য বিধায় ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধেও একই মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়। জনগণের কাছে রাজনীতিকে এবং একই সঙ্গে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র, উন্নয়ন সমৃদ্ধির ধারক ও বাহক জিয়া পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন ও বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা করা হয়।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘১/১১ জরুরি অবস্থার ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের জরুরি অবস্থার সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের মামলাগুলো বিভিন্ন উপায়ে স্থগিত বা প্রত্যাহার করলেও বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, ডা. জোবায়দা রহমানসহ বিএনপি নেতৃবৃদ্ধের বিরুদ্ধে ১/১১ সরকারের দায়ের করা মামলাগুলো অব্যাহত রেখে সেগুলো ফরমায়েশি রায় দিয়ে তাদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র করেছে। যা আজও অব্যাহত আছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এমন এক সময় তারেক রহমান এবং ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হলো, তারেক রহমানের হিরন্ময় নেতৃত্বে বর্তমানে ব্যর্থ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলন চলছে। ব্যাপক জনসম্পৃক্ত এই আন্দোলনে সরকার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দমন করার জন্য গুলি করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করছে। বাধা, প্রতিবন্ধকতা, গ্রেপ্তার মিথ্যা মামলা দিয়ে নিষ্ঠুর দমন নিপীড়ন চালিয়েও আন্দোলন নস্যাৎ করতে পারছে না, জনস্রোত ঠেকাতে পারছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, যে সকল সম্পত্তির মালিক তারেক রহমান নন, কোন দলিল বা চুক্তিতে যেখানে তারেক রহমানের নাম, স্বাক্ষর বা সংশ্লিষ্টতা নাই, তাঁকে সেসব সম্পত্তির গায়েবী মালিক বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনকি তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী কর পরিশোধকৃত সম্পদ নিয়েও কাল্পনিক অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারের নির্মম প্রতিহিংসায় দেশ আজ পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। সরকার রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না। চাঁদাবাজি, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার করে সকলের জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলেছে। জনগণকে বিভ্রান্ত ও আন্দোলন দমন করতে নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আবারও চক্রান্ত শুরু করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ইতোপূর্বেও বলেছি এই ১/১১ থেকেই বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরানোর একটা স্কিম কাজ করছে, যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। আর তারই অংশ হিসেবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে আগে অর্থাৎ ২০১৮ সনে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছিল। এখনও ঠিক একই কায়দায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে তারেক রহমানকে একতরফাভাবে সাজা দেওয়ার সকল প্রকারের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এই সরকার। তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে তা অবান্তর, ভিত্তিহীন, অমূলক। চার্জ গঠন করে মামলার একতরফা যে রায় দেওয়া হবে তা হবে প্রতিহিংসামূলক ফরমায়েশী।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ড. মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান প্রমুখ।