আপনাদের দোহাই দেওয়ার জন্য এখানে আনি নাই : হাসনাত আব্দুল্লাহ
‘আপনাদের আমরা দোহাই দেওয়ার জন্য এখানে আনি নাই। এক্সকিউজ দেওয়ার জন্য এখানে আনি নাই। আপনাদের এখানে এনেছি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।’
আজ বুধবার (৮ জানুয়ারি) কুমিল্লায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
জেলা শহরে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের সমর্থনে জনসংযোগ শেষে শহরের টাউন হল মাঠে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাসনাত আব্দুল্লা। এর আগে পুলিশ লাইন থেকে শুরু করে কান্দিরপাড়সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জনসংযোগ করেন তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অন্তর্বর্তীসরকারকে মাঝেমধ্যে দোহাই দিয়ে বলতে শুনি, সিন্ডিকেটের হাত পরিবর্তন হয়েছে, চাঁদাবাজির হাত পরিবর্তন হয়েছে, টেন্ডারবাজির হাত পরিবর্তন হয়েছে। আপনাদের আমরা দোহাই দেওয়ার জন্য এখানে আনি নাই। এক্সকিউজ দেওয়ার জন্য এখানে আনি নাই। আপনাদের এখানে এনেছি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। যেই হাত চাঁদাবাজি করে, টেন্ডারবাজি করে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। এক্সকিউজ দেওয়ার সুযোগ আপনাদের নেই। আপনাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ৫ আগস্টের আগে আমাদের যে অবস্থান ছিল আমাদের সে অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের ব্যবস্থা করা। যেখানে সরকার থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা এ বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে গিয়েছি। কিন্তু সরকার যেহেতু নিজেই দায়িত্ব নিয়েছে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করবে। তাই আমরা ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্রটি ঘোষণা করিনি।
আমরা রাজনৈতিক ঐকমত্যকে প্রাধান্য দিয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো ৩১ ডিসেম্বরের পর এত দিন কেটে গেলেও সরকার এখনও কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিল, গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণা করতে হবে।
ঘোষণাপত্রে অবশ্যই শহীদ ও আহতদের স্বীকৃতি দিতে হবে উল্লেখ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ১৯৪৭, ৭১ ও ২০২৪ এর যে ধারাবাহিকতা সেখানে সুস্পষ্ট তার বর্ণনা থাকতে হবে। আর সেটাতে আমরা কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছি তার বর্ণনা থাকতে হবে। যে রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করেছে তাদের অংশগ্রহণে স্বীকৃতি সেখানে থাকতে হবে। জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ফ্যাসিবাদি রাজনীতির বিরুদ্ধে সে আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এই ঘোষণাপত্রে থাকতে হবে। আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে ঘুরে বেড়াব এবং সাধারণ মানুষ যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল তারা এই ঘোষণাপত্রে কী চায় আমরা তুলে ধরব। যাতে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদ মাথা চাড়া দিতে না পারে।
হাসনাত আরও বলেন, ‘সরকার ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে আহত ও শহীদদের পরিবারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা ছিল। কিন্তু আমরা এখনও আহতদের ও শহীদ পরিবারের আর্তনাদ শুনি। যেটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে আহত ও শহীদদের প্রতি। আমরা দেখেছি জুলাই ফাউন্ডেশনের আহত ও শহীদদের পরিবার আমলা তান্ত্রিক জটিলতার শিকার হয়েছিল। আমরা বলতে চাই, ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে যেন কোনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না থাকে।
কুমিল্লা ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল উল্লেখ করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘হাসিনার নির্ঘুমের কারণ ছিল এই কুমিল্লা। কুমিল্লা থেকে বিরোধী প্রতিধ্বনি সবসময় উচ্চারিত হয়েছে। কুমিল্লা থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকবে। ২৪ পরবর্তী সময়ে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নের কথা বলা হচ্ছে সেটির যাত্রা কুমিল্লা থেকেই শুরু হবে।