জহুর আলীর মরদেহ হস্তান্তর ভারতীয় পুলিশের
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে উদ্ধার হওয়া জহুর আলীর মরদেহ হস্তান্তর করেছে দেশটির ত্রিপুরার খোয়াই থানা পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় বাল্লা সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে চুনারুঘাট থানা পুলিশের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে তারা।
এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ৫৫ ব্যাটালিয়নের বাল্লা বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল ইসলাম, চুনারুঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুর রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী।
ভারতের পক্ষে ছিলেন ১০৪নং ব্যাটালিয়ন বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার কুন্দন কুমারসহ তাঁর দল, খোয়াই থানার ওসি সুবীর মালাকার, ইন্সপেক্টর যুগল ত্রিপুরা, খোয়াই মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রঙ্গলাল দেববর্মা।
বিজিবি জানায়, গত ৬ জানুয়ারি ভারতের অভ্যন্তরে নিহত বাংলাদেশি মো. জহুর আলীর মরদেহ হস্তান্তর/গ্রহণের জন্য আজ বাল্লা কোম্পানির সীমান্ত এলাকায় কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাল্লা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মো. নাজমুল হোসেন এবং বিএসএফের পক্ষে স্টেনলি বিএসএফ কোম্পানি কমান্ডার ইন্সপেক্টর কুন্দন কুমার।
পতাকা বৈঠকে বিজিবির সদস্য ৬ জন, বিএসএফের সদস্য ৬ জন, বাংলাদেশি পুলিশ সদস্য পাঁচজন এবং ভারতীয় পুলিশ সদস্য ছয়জনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নিহত জহুর আলীর ছেলে অলি মিয়া (২০) শনাক্ত করেন। পরে খোয়াই থানা পুলিশের কাছ থেকে চুনারুঘাট থানা পুলিশ মরদেহ গ্রহণ করে। ছেলের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে পুনরায় মরদেহর ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিজিবি আরও জানায়, বিএসএফের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছে, জহুর আলীর হার্টে ব্লক ছিল, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। আজ তাঁর পোস্টমর্টেম হয়েছে। অফিশিয়াল রিপোর্ট পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। মৃত্যুর বিস্তারিত কারণ ময়নাতদন্ত রিপোর্টপ্রাপ্তির পর জানা যাবে বলে বিএসএফ বিজিবিকে জানিয়েছে।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ঢুলনা গ্রামের মুনছুব আলীর ছেলে জহুর আলী (৫০) গত শনিবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরের দিন দুপুরে খবর আসে ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই মহকুমার গৌড়নগর এলাকায় জহুর আলী মরদেহ পাওয়া গেছে। উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকার ১৯৬৮ নং পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে একটি ঘরের সামনে তার মরদেহ দেখে স্থানীয়রা ভারতীয় বিএসএফকে খবর দেয়। পরে বিএসএফ মরদেহ উদ্ধার করে খোয়াই থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আজ খোয়াই থানা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বাংলাদেশে ছেলের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
নিহত জহুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন জানান, তার স্বামী ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি বাড়িতে আসেন। ঢাকা থেকে আসার সময় গ্রামের বাজারে বিক্রির জন্য কিছু লুঙ্গি কিনে নিয়ে আসেন। সেগুলো নিয়ে তিনি সোমবার বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় তিনি ঘরে থাকা ১১ হাজার টাকাও সঙ্গে করে নিয়ে যান। এরপর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে চুনারুঘাটের বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকার লোকজন ভারতীয় সীমান্তের গৌরনগর এলাকায় তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
জহুর আলীর ছেলে অলি হাসান জানান, তার ধারণা টাকার জন্য কেউ তার বাবাকে হত্যা করে থাকতে পারে। তার বাবার সঙ্গে থাকা ১১ হাজার টাকা ও আটটি লুঙ্গি পাওয়া যায়নি।