এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা
চট্টগ্রামে দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু (৩৫) নিহত হয়েছেন।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মহানগরীর জিইসি মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে ছেলেসন্তান আক্তার মাহমুদ মাহিরকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের উদ্দেশে রওনা হন মিতু। বাসা থেকে ৫০ গজ দূরে রাস্তায় মোটরসাইকেলে করে তিন দুর্বৃত্ত প্রথমে মিতুকে ধাক্কা দেয়। পরে তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। এর পর মাথার পেছনে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাঁরা মিতুকে চিনতে পারেন।
বাবুল আক্তার ও মাহমুদা খানম মিতু দম্পতির ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহিদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। তাবাসসুম তাসনিম নামের এক মেয়েও রয়েছে এ দম্পতির।
বাবুল আক্তার সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-গোয়েন্দা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায় বদলি হন।
ঘটনা নিয়ে ছেলের ভাষ্য
বাবুল আক্তার দম্পতির ছেলে আক্তার মাহমুদ মাহির বলে, ‘ওই যে গুণ্ডা, আম্মুকে মারসে। ওরা হোন্ডা করে ওখানে দাঁড়ায়সিল। ওখানে তিনজন ছিল।’
‘তারপর একজন দৌড়ায়ে আইসা আম্মুকে নিচে ফালাই দিয়ে চাকু ঢুকাই দিসিল। আরেকজন গুলি মেরে মেরে ফেলসে। তারপর আম্মুর মুখের থেকে রক্ত বের হচ্ছিল।’
প্রতিবেশীরা যা বললেন
মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিবেশী মধ্যবয়সী এক পুরুষ বলেন, ‘আমি নিচে নামসি, আমার বাচ্চা নিয়া। দেখতেসি উনার বাচ্চা কান্না করতেসে গেটে। তার আগে ইন্টারকমে আমাকে দারোয়ান ফোন দিল, স্যার বাবুল আক্তারকে (বাবুল আক্তারের স্ত্রী) মেরে ফেলসে।’
‘তো, নিচে নেমে দেখতেসি, বাচ্চা কান্না করতেসে। দৌড়ে আসলাম, দেখি ডেড বডি।এতটুকু দেখলাম।’
প্রতিবেশী এক নারী বলেন, ‘আমরা দুজনই ছিলাম। বাচ্চা চলে গেসে। আমরা দেখি উনি (মাহমুদা খানম মিতু) একা পড়ে আছে। আর কিসু দেখি নাই। তখন ৬টা ৪০।’
মিতু যে বাসায় থাকতেন সে বাসার দারোয়ান বলেন, ‘লোকে দৌড়াদৌড়ি করতেসে। তা আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কী হইসে। কয় একটা মহিলারে মাইরা গেসেগা। তকন আমি দেহি বাবুল সাহেবের ছেলেডা (কান্নাজড়িত কণ্ঠে)।’
‘তকন আমি দিসি দৌড়। দৌড় দিয়া গিয়া কোল লইসি। কয় আমার আব্বুরে মাইরালাইসে। তকন ওইডারে বুহ (বুকে) রাইখা দেখলাম সাইডে দুইডা গুলি পইড়া রইসে। এর পরে ছেলেডারে লইয়া আইসি আমি।’
ওই দারোয়ান আরো বলেন, ‘এক লোহে (লোক) কইল যে, হোন্ডা দিয়া তিনডা লোক ওই দিকতে আইসা, কয় আগে নাকি চাকু মারসে। চাকু মাইরা তিনটা গুলি করসে।’
‘বাচ্চাটা তাড়াতাড়ি আমি লইয়া আইসি। বলা যায় না, বাচ্চাডাও তো মাইরা লাইতারে।’
সিএমপি কমিশনার যা বললেন
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘আসলে উনি বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলের বাসে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য এখানে এসেছিলেন। এটা ৬টা ৩৫, ৪০-এর দিকে হবে। তো ওই সময়ে একটা মোটরসাইকেলে তিনজন এসেছে। একজন হেলমেট পরা আর দুজন।’
‘প্রথমে একটু তর্কাতর্কি করে একপর্যায়ে প্রথমে ছুরি মেরেছে। পরে গুলি করে চলে গেছে। ঘটনাস্থলেই উনার মৃত্যু হয়েছে।’
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা এখন খতিয়ে দেখছি, এই রাস্তায়, অয়েল ফুড থেকে শুরু করে মন্দির পর্যন্ত অনেক সিসি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) আছে। সবকটির ফুটেজ নিয়ে আমরা এদের চেহারা শনাক্ত করতে পারব।’
ইকবাল বাহার আরো বলেন, ‘বাবুল আক্তার যেহেতু জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিয়ে অনেক কাজ করেছে, তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সেটি অবশ্যই আমরা খতিয়ে দেখব এবং আশা করি, খুব দ্রুততার সঙ্গেই আমরা এদের গ্রেপ্তার করতে পারব।’
সর্বশেষ
মাহমুদা খানম মিতুর মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন মর্গে রাখা হয়েছে। সেখানে গেছেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য প্রমুখ।