তিতাসকে দায়ী করে ‘টাম্পাকো পরিবারের’ মানববন্ধন
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ‘লাইন লিকেজকে’ দায়ী করে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন ওই কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা।
আজ শনিবার ‘আমরা টাম্পাকো পরিবার’-এর ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচি থেকে কারখানার মালিক বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়।
দুপুরে টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতুর নিচে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় শ্রমিক-কর্মচারীদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন ছিল। কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন কারখানার অপারেটর জাকির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, লিটন, মজিবুর রহমান, আব্দুর রহিম প্রমুখ। তাঁরা কারখানা খোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্যানার ও ফেস্টুনে লেখা ছিল, ‘টাম্পাকো পুড়ল কেন, তিতাস গ্যাস জবাব চাই’, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই, আমরা সবাই বাঁচতে চাই’, সুখে ছিলাম দুঃখে আছি, আমরা টাম্পাকো ভালবাসি’, ‘আমাদের মালিক আমাদের পরিবার’ ইত্যাদি স্লোগান।
টঙ্গীর বিসিক নগরীতে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পাঁচদিন পর গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ‘লাইন লিকেজের’ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা মেট্রো উত্তরের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) রানা আকবর হায়দারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, তিতাতের ঢাকা মেট্রো ৪-এর উপমহাব্যবস্থাপক বাসুদেব সাহা এবং উপব্যবস্থাপক (ভিজিলেন্স বিভাগ) শহীদ হোসাইন সোহাগ। এ কমিটি সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা।
এর বাইরেও এ ঘটনায় পৃথক আরো চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরিচয় শনাক্ত না করতে পারা বাকি সাতটি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনার একদিন পর রোববার রাতে নিহত শ্রমিক জুয়েলের বাবা আবদুল কাদের বাদী হয়ে কারখানার মালিক মকবুল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী শেফালী পারভীনসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতদের আসামি করে টঙ্গী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারখানার ছয় কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। এঁরা হলেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন, ব্যবস্থাপক (সার্বিক) সমীর আহমেদ, ব্যবস্থাপক হানিফ ও উপসহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন।
পুলিশ এ মামলায় আজ শনিবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অষ্টম দিনের মতো উদ্ধারকাজ
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আজ অষ্টম দিনের মতো উদ্ধারকাজ চালিয়েছে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল।
এ দিন নিখোঁজদের তালিকায় আরো এক শ্রমিকের নাম যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে নিখোঁজের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ জনে।
আজও সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের উদ্ধারকর্মীরা কারখানার বাইরের দিক থেকে ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে ক্রমশ কারখানা ভবনের ভেতরের দিকে এগোচ্ছেন। উদ্ধারকর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কারখানা ভবনের ধ্বংসাবশেষ ড্রাম ট্রাক দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
এ পর্যন্ত প্রায় ২৬১০ টন জঞ্জাল সরানো হয়েছে। তবে ভবনের ভেতরে থাকা রাসায়নিক ড্রামগুলো বিস্ফোরণের আশঙ্কায় সতর্ক হয়ে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা। উদ্ধারকাজে তাদের সহায়তা করছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।