‘অবহেলার বিরুদ্ধে মামলা, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নয়’
‘এখনো জানা গেল না যে চৈতী কী রোগে মারা গেল। ডেঙ্গু, ক্যানসারসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলছেন চিকিৎসকরাই। তবে কেউই তাদের বক্তব্যে স্থির থাকতে পারেননি। মামলা করা হয়েছে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়।’
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফিয়া জাহিন চৈতীর মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ বুধবার সকাল থেকেই টিএসসি এলাকায় মানববন্ধনে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষার্থীরাই এসব কথা বলেন। আফিয়া ওই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আজ বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্য, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরজুড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে চৈতীর বিভাগের শিক্ষক, সহপাঠীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. নিয়ামুল নাসের বলেন, ‘আফিয়া নিউমোনিয়া নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পরবর্তীতে বলা হলো ক্যানসার হয়েছে। আর মৃত্যুর সার্টিফিকেটে ডেঙ্গু না ক্যানসার এতে নট কনফার্ম লেখার কারণে রহস্য তৈরি হয়েছে। আমরা কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। আমরা আফিয়ার মৃত্যুর অবহেলায় জড়িতদের বিচার দাবি করছি।’
মৃত্যুর পর আফিয়ার ওপর অপবাদ দেওয়ায় নিয়ামুল নাসের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘ডাক্তারদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্ট তৈরি করে যন্ত্র। আর সেটির ব্যাখ্যা দেন ডাক্তাররা। কিন্তু তিনজন ডাক্তার ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেছেন। সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো কিছুর সমন্বয় ছিল না।’
প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাবের খান এ সময় তিনটি দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহেলার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে, সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ফারহানা সীমা কর্তৃক আফিয়ার ওপর মিথ্যা অপবাদের বিচার ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) প্রেসনোটের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।’
মানববন্ধনে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মেডিকেলের বিভিন্ন ফেসবুক পেজে নোংরা কথা লেখা হচ্ছে। তাঁরা এর তীব্র নিন্দা জানান। তাঁরা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নয়, যারা আফিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলা করেছে তাদের বিচার দাবি করছেন। যাতে আর কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীকে এভাবে অকালে চলে যেতে না হয়।’
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এতে লেখা ছিল, ‘চিকিৎসাসেবা আমাদের অধিকার’, ‘জীবন বাঁচাতে দিয়েছি রক্ত, আজ নাকি আমরা সন্ত্রাসীর ভক্ত’; ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে’, ‘আমরা শোকাহত’; ‘মূল ঘটনা ধামাচাপা দিতে মৃত ব্যক্তির চরিত্রে কালিমা কেন?’ ‘মৃত রোগীকে আইসিওতে রেখে ব্যবসা বন্ধ কর, জাতির পিতার বাংলায় অবহেলায় মৃত্যু নয়।’
গত ১৭ মে আফিয়াকে ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ১৮ মে দুপুর ১২টায় আফিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।