হারলেই বাংলাদেশের বিদায়
ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দলকে টপকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। টাইগারদের ওপর ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশাও ছিল তাই আকাশচুম্বী। কন্ডিশনিং ক্যাম্প ও আয়ারল্যান্ড সিরিজে বহুলাংশে সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হন টাইগাররা। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এসে মাশরাফি-সাকিবরা আবার কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছেন। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্টে এখন বেশ নাজুক অবস্থা রয়েছে টাইগাররা। সোমবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে গেলেই তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে। এমন সমীকরণের ম্যাচে ওভালে অসিদের মুখোমুখি হচ্ছে মাশরাফির দল। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ওভালে শুরু হবে ম্যাচটি।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রায় এক মাস আগেই ইংল্যান্ডে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করতে যান মাশরাফিরা। ডিউক অব নরকোফ ও সাসেক্স একাদশের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলার সুখস্মৃতি নিয়ে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যায় তামিম-সাকিবরা। সিরিজে আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দল আবার ইংল্যান্ডে ফিরে যায়। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে তামিমের শতকে দুর্দান্ত সূচনা করে টাইগাররা। পাকিস্তানি অখ্যাত ব্যাটসম্যান ফাহিম আশরাফের কাছে ম্যাচটা হারলেও ব্যাটিং প্রদর্শনীটা ভালো হওয়ায় মাশরাফিরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচেই অবশ্য বাংলাদেশকে মাটিতে নামায় ভারত। বড় ব্যবধানে হরে যায় সাকিবের দল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচেও ব্যাটিংয়ে দারুণ করে টাইগাররা। তামিমের শতক আর মুশফিকের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৩০৫ রান তুলেও বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায়। এতে অবশ্য বাংলাদেশের দোষের চেয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং কৃতিত্বই বেশি।
আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট বিশ্বে এখন পর্যন্ত এই একটি দেশের বিপক্ষেই টাইগারদের পরিসংখ্যানটা একদম যুতসই নয়। ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল দলটির বিপক্ষে ২০টি ওয়ানডে খেলে কেবল মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেটিও আবার প্রায় এক যুগ আগে। এরপর ক্যাঙ্গারুদের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচ খেলে ১২টিই পরাজয় বরণ করতে হয়েছে টাইগার ক্রিকেটারদের। একটি ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। অসিদের বিপক্ষে ২০০৫ সালে সবেধন নীলমনি একটি জয় পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত জিম্বাবুয়েকে ৩৯ বার হারিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই বাংলাদেশের পরিসংখ্যানটা সবচেয়ে সমৃদ্ধ। এই বাদে নিউজিল্যান্ডকে নয়বার, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাত, ভারতকে পাঁচ ও দক্ষিণ আফিকাকে তিনবার হারালেও এখনো অজেয় থেকে গেছে অস্ট্রেলিয়া।
মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটিং ডিসপ্লেতে ভর করে দৌর্দণ্ড প্রতাপশালী অজেয় সেই অস্ট্রেলিয়া দলকে হারানোর পর এখন পর্যন্ত দলটির বিপক্ষে একটিও জয় না পাওয়া বিস্ময়করই বটে। আজ মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দল অবশ্য কিছুটা নির্ভার থাকতেই পারে। কারণ অসিদের বিপক্ষে সেই একমাত্র জয়টি এই ইংল্যান্ডেই পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে বোলিংয়ে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। দ্বিতীয় বলেই অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মাশরাফি। এরপর ষষ্ঠ ওভারে রিকি পন্টিংকে ফেরান তাপস বৈশ্য। এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার দল তো অস্ট্রেলিয়া নয়, এরপরই শুরু হয় প্রতিরোধ। ডেমিয়েন মার্টিনের ৭৭, মাইকেল ক্লার্কের ৫৪ রানে ভর করে ২৫০ রান তুলে নেয় পন্টিংয়ের দল। অস্ট্রেলিয়া দল তখন যত কম স্কোরই করুক না কেন, প্রতিপক্ষকে বেধে রাখার মতো বোলার ছিল দলটিতে। ৭২ রানে প্রথম ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বসছিল বাংলাদেশ।
এর পরই শুরু হয় আশরাফুলীয় কীর্তি। গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পিদের মতো তারকাদেরদের পাড়াগায়ের বোলারের পর্যায়ে নামিয়ে আনেন বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রথম পোস্টার বয়। হাবিবুল বাশারকে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৩০ রান। ৪৭ রান করে বাশার ফিরলেও আশরাফুল খেলে যান নিজের মতো করেই। ১০১ বলে ১০০ রান করে আশরাফুল যখন ফিরে যান বাংলাদেশ তখন জয় থেকে মাত্র ২৩ রান দূরে। ১৩ বলে ২১ রান করে বাকি কাজটুকু নির্বিঘ্নেই সারেন আফতাব আহমেদ। ৪ বল হাতে রেখে পাঁচ উইকেটে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুখস্মৃতি হাতরাতে গেলে এখনো বাংলাদেশকে ২০০৫ সালেই ফিরে যেতে হয়। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও অসিদের বিপক্ষে আরেকবার জয়োল্লাসে মাততে পারেনি লাল-সবুজের দেশ।
এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে স্বস্তিতে নেই অস্ট্রেলিয়াও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারতেই বসেছিল দলটি। বেরসিক বৃষ্টি এসে কিউইদের প্রথম জয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ওয়ার্নার, হেনরিকসরা নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সামনে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। আজকের ম্যাচে কিউইদের কাছ থেকেই অনুপ্রেরণাটা নিতে হবে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে। ব্যাটিংয়ে তামিম-মুশফিকদের নিজের সুনামটা ধরে রাখতে হবে। সৌম্য-ইমরুল-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদেরও আরেকবার নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই সেরা ছন্দে নেই সাকিব আল হাসান। অসিদের বিপক্ষে জয় পেতে হলে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই। কাটার মাস্টার মুস্তাফিজও তাঁর ধার হারিয়ে ফেলেছেন। স্বরূপে ফিরে আজ আবার কাটার, সুইং, ইয়র্কার দিয়ে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে হবে তাঁকে। আর নেতৃত্বগুণে কার্ডিফকে ওভালে ফেরাতে হবে মাশরাফির। এই সব সমীকরণ মিলে গেলে আজ হয়তো আর অজেয় থাকতে পারবে না অস্ট্রেলিয়া।