গ্রন্থকীটদের জন্য সাত শহর
যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ঢাকা কিসের শহর? কেউ বলবেন দুর্ভোগের শহর, কেউ বলবেন জ্যামের শহর, কেউ বলবেন মসজিদের শহর। তবে দুনিয়ায় এমন শহর আছে, যেগুলো বইপোকা বা গ্রন্থকীটদের শহর হিসেবে পরিচিত। রিডার্স ডাইজেস্ট জানিয়েছে তেমনই সাত শহরের কথা। শহরগুলো যুগে যুগে জন্ম দিয়েছে বিখ্যাত সব কবি-সাহিত্যিককে। বইপ্রেমীদের জন্য এগুলো যেন শহর নয়, বইয়ের সাতটি মহাসাগর। চাইলে এবারের ঈদে দুর্ভোগ-জ্যামের এই শহর ছেড়ে ঘুরে আসতে পারেন সাত শহরে যেকোনো একটিতে।
১. সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া
রাশিয়ার বেশ কিছু সেরা গল্প ও উপন্যাসে পিটার্সবার্গকে বর্ণনা করা হয়েছে ভেনিস অব নর্থ হিসেবে। বলা হয়েছে এই শহর সৌন্দর্যে ঠাসা এক শহর। ফিয়দর দস্তয়ভস্কি ও আলেকজান্দার পুশকিনের বসবাস ছিল এই শহরে। তাঁদের বসতি দুটি পরিণত হয়েছে জাদুঘরে। যেখানে দয়োভোস্কি ও পুশকিন আছেন, সে শহর ভ্রমণ করতে বইপ্রেমীদের আর কোনো কারণ লাগার কথা নয়।
২. ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডের রাজধানীকে এককথায় বলা যায় সাহিত্যের মক্কা। আর হবেই বা না কেন, বাকস্বাধীনতার জন্য সুপরিচিত এই শহরটি জন্ম দিয়েছে জেমস জয়েস, ডব্লিউ. বি ইয়েটস এবং স্যামুয়েল বেকেটের মতো সাহিত্যিকদের। এই শহর সাহিত্যে যতগুলো নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছে, তার ধারেকাছে নেই আর কোনো শহর। তাই মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। ইউনেস্কো নতুনভাবে ২০১০ সালে ডাবলিনকে ‘সিটি অব লিটারেচার’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই একসঙ্গে এতগুলো সাহিত্যিকের সান্নিধ্য একজন বইপোকা হিসেবে হাতছাড়া করা উচিত হবে না। আপনার অপেক্ষায় আছে ডাবলিনের ‘ডাবলিন রাইটার্স মিউজিয়াম’, ‘দ্য ন্যাশনাল প্রিন্ট মিউজিয়াম’, ‘অ্যাবে থিয়েটার’সহ আরো অনেক কিছু।
৩. প্যারিস, ফ্রান্স
প্যারিসকে ডাকা হয় ‘সিটি অব লাইটস’ হিসেবে। এক অদ্ভুত মায়াবী টানে প্যারিস যুগে যুগে আহ্বান করেছে বহু লেখক ও সাহিত্যপ্রেমীকে। শুধু লেখালেখির উদ্দেশ্যে সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজ দেশ ছেড়ে প্যারিসে পাড়ি জমিয়েছেন হেনরি মিলার, গারট্রুড স্টেইনের মতো সাহিত্যিকরা। প্যারিসের ক্যাফেগুলোতে বসেই এঁরা ঝড় তুলেছেন কাগজে । তবে প্যারিস নিজে কিন্তু বন্ধ্যা নয়। ফরাসি সাহিত্যের জন্য সে নিজেও প্রসব করেছে বালজাক, ভলতেয়ার, জুলভার্নের মতো বাঘা বাঘা লেখক। ফরাসি সাহিত্যের বিভিন্ন নিদর্শন ছড়িয়ে আছে ফ্রান্সের অলিগলিতে, স্মৃতিস্তম্ভে, বা ক্যাফেতে।
৪. টোকিও, জাপান
যে শহরে এক হাজার ৭০০ বইয়ের দোকান রয়েছে, তারা একটু গর্ব করতেই পারে। বলছি জাপানের রাজধানী টোকিওর কথা। এতগুলো বইয়ের দোকান পৃথিবীর আর কোনো শহরে আপনি খুঁজে পাবেন না। কিন্তু হারুকি মুকারামির সাহিত্যকর্ম ছাড়া জাপানের অধিকাংশ সাহিত্যই বাইরের পাঠকের কাছে অচেনা। তবে টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল লিটারেরি ফেস্টিভ্যাল (আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব) এই প্রবণতাকে বদলানোর চেষ্টা করছে। টোকিওর রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতে পাবেন নাতসুমে সোসেকি, ইউকিও মিশিমা, কোবো আবে, কেনজ আবুরো ওয়ে এবং ব্যানানা ইয়োশিমোতোর মতো লেখকদের সাহিত্যকর্ম।
৫. বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র
উনিশ শতকে বেশ কিছু সাহিত্যমনা নাগরিকের বসবাস ছিল এই বোস্টনে। ফলে এটি যেমন বাইরের সাহিত্যিকদের আকর্ষণ করেছে, তেমনি এই শহর নিজেও তৈরি করেছে ন্যাথানিয়েল হাওথ্রোন, হেনরি ডেভিড, থিওরেয়াও এবং রালফ ওয়াল্ডোর মতো কিংবদন্তিদের। সাহিত্যের গুণগ্রাহীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই শহরে পা রেখেছিলেন চার্লস ডিকেন্স ও হেনরি জেমস। উইলিয়াম ফকনারের ‘দ্য সাউন্ড অব ফেরি’র মতো জনপ্রিয় লেখনীর জন্ম হয়েছিল এই বোস্টনেই।
৬. এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড
এডিনবার্গ ছিল ইউনেস্কোর প্রথম সিটি অব লিটারেচার। এডিনবার্গের মাটিতে জন্ম নিয়েছেন রবার্ট লুইস স্টিভেনসন এবং স্যার ওয়াল্টার স্কটের মতো সাহিত্যিকরা। পাশাপাশি এই এডিনবার্গেই কাগজে-কলমে ঝড় তুলেছেন ইরভিন ওয়েলস, হ্যারি পটার খ্যাত জে কে রাউলিং, অ্যালেকজান্ডার ম্যাককল স্মিথ, ইয়াইন ব্যাংকস এবং ইয়ান র্যানকিন। তবে এডিনবার্গ শুধু যে লেখক-সাহিত্যিকদের জন্ম দিয়েছে তা কিন্তু নয়, এখান জন্মেছেন ডেভিড হিউম ও অ্যাডাম স্মিথের মতো দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ, যাঁরা চিন্তার জগতে ঝড় তোলা বই লিখে গিয়েছেন। রবার্ট বার্নসের মতো বিখ্যাত কবির জন্মও এই এডিনবার্গেই। এ ছাড়া বিশ্বকোষ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা প্রথম মুদ্রিত হয় এখানেই।
৭. লন্ডন, যুক্তরাজ্য
লন্ডনকে কেন সাহিত্যের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয়, এ নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। ইংরেজি সাহিত্যে উইলিয়াম শেকসপিয়ার থেকে শুরু করে চার্লস ডিকেন্স এবং সেখান থেকে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল; লন্ডন ছিল এই সাহিত্য দেবতাদের জন্মস্থান। বইপোকাদের যাঁরা লন্ডনে ঘুরতে আসবেন বলে মনস্থির করেছেন, তাঁদের জন্য লাখ লাখ ধরনের বই নিয়ে অপেক্ষা করছে ব্রিটিশ লাইব্রেরি। বইপ্রেমীরা পড়ার পাশাপাশি ঘুরতে পারবেন উপন্যাসে উল্লিখিত বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে রয়েছে গ্লোব থিয়েটার, শার্লক হোমস ও জেমস ওয়াটসনের সেই চিরচেনা ঠিকানা ২২১ বি বেকার স্ট্রিট।