আওয়ামী লীগের নেতারা জেনেটিক্যাল লায়ার : রিজভী
দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ক্রোধকে প্রশমিত করতে সরকারের মন্ত্রী-নেতারা মিথ্যার বাতাস বইয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেছেন, ‘সত্যের লেশ এরা সহ্য করে না। আওয়ামী লীগের নেতারা জেনেটিক্যাল লায়ার। কিছু নেতা আছে যাঁরা মন্ত্রিত্ব হারিয়ে এখন বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
এঁদের দ্রুত মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ যদি এখনো নিজেদের সংশোধন না করে তাহলে অবিলম্বে তাদের বিপজ্জনক অবতরণ ঘটবে।’
আজ রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে জেনেছেন জুন ক্লোজিংয়ের নামে সারা দেশে আওয়ামী লুটপাট চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার এসব লুটপাটের খবর পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি মসজিদ মন্দিরের নামে ভুয়া কমিটি তৈরি করে অথবা নামসর্বস্ব ধর্মীয় ও সামাজিক ক্লাব সংগঠন দেখিয়ে সরকারি বরাদ্দ নিজেদের পকেটে ঢোকাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। সারা দেশের জেলা উপজেলায় চলতি জুনে ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসবের খবর গণমাধ্যমগুলোর এখন প্রধান শিরোনাম। আজকেও গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে-মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় অস্তিত্বহীন মসজিদ, মন্দিরের নামে সরকারি বরাদ্দ নিয়ে লুটপাট চালাচ্ছে তারা।’
আজ যে শিশুটি জন্মেছে তাকেও ঋণের বোঝা বইতে হচ্ছে
বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাজেট পাশের আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-তাঁরা দেশকে আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। কিন্তু গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে-আজকে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করবে তার মাথায়ও ৪৬ হাজার ১৭৭ টাকা ঋণের বোঝা পড়বে। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের ওপর গড়ে ৪৬ হাজার টাকা ঋণের বোঝা দিয়েই শুরু হয়েছে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছর।
২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে যে ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতির এই বাজেট পুরোটাই ঋণনির্ভর। এই ঋণ প্রতিবছর শুধু বাড়ছে। ফলে জনগণের ওপর ঋণের বোঝাও বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে আরো বলেছেন, তাঁর সরকার বিদেশিদের কাছ থেকে কোনো ঋণ নিচ্ছে না। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের শেষে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে রাষ্ট্রের ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়াবে সাত লাখ ৬১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তর থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে পুরো দেশের মানুষের ওপর ৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ঋণ ছিল।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যাণ ব্যুরোর তথ্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। ফলে এই জনসংখ্যার ওপর মাথাপিছু ঋণ দাঁড়াবে ৪৬ হাজার ১৭৭ টাকা। মূলত বিশাল বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ব্যয়বহুল ঋণ নিতে হচ্ছে। আর এই কারণেই জনগণের ওপর দেশি-বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়ছেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। বর্তমান সরকার দেশকে এগিয়ে না নিয়ে বরং দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
প্রসঙ্গ মাহমুদুর রহমান
আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমানের আজকের সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মাহমুদ রহমানের বাসায় পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা পুলিশ গভীর রাত থেকে ঘণ্টা দেড়েক আগ পর্যন্ত ঘিরে রাখে। গোয়েন্দা পুলিশ মাহমুদুর রহমানকে সংবাদ সম্মেলন করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান তাদের কাছে জানতে চাইলে, গোয়েন্দারা ওপর মহলের কথা জানায়। এটি মুক্ত চিন্তা ও বাক স্বাধীনতার ওপর চরম কুঠারাঘাত। গণতন্ত্রকে শিকড়সহ তুলে ফেলার আওয়ামী বিষাক্ত প্রক্রিয়ারই অংশ। অত্যন্ত স্পষ্টভাষী ও সত্য কথা সাহসের সঙ্গে লেখার জন্য সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে জালিম সরকার শুরু থেকেই দুশমন মনে করে। সরকার মাহমুদুর রহমানের ওপর দীর্ঘদিন স্টিমরোলার চালিয়েও তাদের প্রতিহিংসার দাবানল স্তিমিত করতে পারছে না। তাই মাহমুদুর রহমান ও তাঁর কথা বলা ও লেখাকে নানাভাবে আটকানোর জন্য সরকার রাষ্ট্রশক্তির দমনযন্ত্র প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে গুলি বর্ষণ
গত শুক্রবার নোয়াখালীতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কর্মীরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘এতে স্থানীয় বিএনপির দুজন নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়া গাইবান্ধা জেলাধীন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা ও ইউপি সদস্য আবদুল মালেককে গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা রামদা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে। তিনি বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিঃশেষ করতে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর এটি আরেকটি বীভৎসতা ও হিংস্রতার প্রতিচ্ছবি।’