র্যাব হেফাজতে সাতজনের মৃত্যু যন্ত্রণা ছিল ভয়াবহ
নারায়ণগঞ্জে র্যাব হেফাজতে সাতজনের মৃত্যু যন্ত্রণা ছিল ভয়াবহ ও অকল্পনীয়। আজ মঙ্গলবার আপিলের রায় ঘোষণার সময় দেওয়া পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট এ কথা বলেন।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সাত খুন মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। এ ছাড়া ১১ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে যাবজ্জীবন দেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় দেওয়া পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, যে সাতজনকে হত্যা করা হয়, র্যাব হেফাজতে তাদের মৃত্যু যন্ত্রণা ছিল ভয়াবহ এবং অকল্পনীয়। র্যাব সদস্যরা এতটাই নির্দয় ছিল যে, তাদের হত্যার পর তলপেট ছুরি দিয়ে কেটে তাদের বস্তাবন্দি করা হয়। প্রতিটি বস্তার সঙ্গে ১০টি ইট বেঁধে দেওয়া হয়, যাতে লাশ নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। তাদের এই নৃশংসতা প্রমাণ করে মৃতদেহের ওপর তারা কতটা নির্দয় ছিল।
আদালত বলেছেন, আসামিরা যে ধরনের অপরাধ করেছে, যদি তারা ছাড়া পেয়ে যায় তাহলে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণ আস্থাহীনতায় ভুগবে। এতে আরো বলা হয়, র্যাব রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিশেষ বাহিনী। তাদের দায়িত্ব হলো জনগণের জানমাল রক্ষা করা এবং নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু এ বাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সদস্য নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে অপরাধ সংঘটিত করেছে। ফলে তাদের বিচার হয়েছে। দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ বাহিনীর প্রতি মানুষের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। কিন্তু কতিপয় সদস্যের কারণে সামগ্রিকভাবে গোটা বাহিনীকে দায়ী করা যায় না।
হাইকোর্ট বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল র্যাব সদস্যের কারণে র্যাবের গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে না, তাদের সন্ত্রাসবিরোধী গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ধূলিস্যাৎ হতে পারে না। কিন্তু এই বাহিনীর কতিপয় সদস্যের শয়তানি প্রবৃত্তি মানবসভ্যতার মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
রায়ে বলা হয়, আসামিরা যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তাতে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল সুপরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক। আর্থিক লেনদেন হয়েছে নূর হোসেনের সঙ্গে। এই নূর হোসেনই হলো এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড (মূল হোতা)। তার সঙ্গে ছিল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, বরখাস্ত হওয়া মেজর আরিফ ও কমান্ডার এম এম রানা।
আসামিপক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষ্য নেই এবং আর্থিক লেনদেনেরও কোনো প্রমাণ নেই। এ বিষয়ে আদালত বলেন, র্যাবের এডিজি জিয়াউল হাসান টাকা লেনদেনের বিষয়ে আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ ছাড়া নিহত নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম আসামি তারিক সাঈদের সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, ‘নূর হোসেন যত টাকা দিয়েছে তার চেয়ে বেশি টাকা দেব, নজরুলকে ছেড়ে দিন।’ এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ টাকার বিনিময়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আর অনৈতিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ থাকে না।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে সাজা কমিয়ে যাদের যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, অপরাধের ধরন বিবেচনায় নিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলে সেটা হবে কঠোর শাস্তি। তাই তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়াই যুক্তিযুক্ত।