কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আজ শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
আইজি প্রিজন সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা জানান, ১২ জন সশস্ত্র কারারক্ষী, ইমাম, ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, জেল সুপার ও জেলারের উপস্থিতিতে ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ রাজু। এর আগে ১০টা ২৫ মিনিটে জল্লাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় কামারুজ্জামানকে। এ সময় তাঁকে জমটুপি পরানো হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, কামারুজ্জামানের মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে লাশ হস্তান্তর করা হতে পারে বলে তিনি জানান।
এর আগে রাত সাড়ে ১০টার কিছু পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করে। এদের মধ্যে একটিতে করেই কামারুজ্জামানের মরদেহ শেরপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দাফনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন তাঁর স্বজনরা। প্রথমে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড শেরপুরের মাটিতে তাঁর লাশ দাফনের বিরোধিতা করলেও আজ জেলা প্রশাসনের কঙ্গে এক বৈঠক শেষে নিজেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন তাঁরা। এর বদলে বিজয় মিছিল করার ঘোষণা দেন মুক্তিযোদ্ধারা।
বিধি অনুযায়ী যেসব কর্মকর্তার ফাঁসির সময় উপস্থিত থাকার কথা, সন্ধ্যা থেকেই তাঁরা একে একে কারাগারে প্রবেশ করেন। সর্বশেষ আজ শনিবার রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা।
এর আগে কারাগারে প্রবেশ করেন ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা শাখার প্রধান কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সহকারী সিভিল সার্জন ডা. আহসান হাবিব, আইজি প্রিজন ইফতেখার আহমেদ, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার, সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী ও অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল ফজলুল কবির। এরপর কামারুজ্জামানকে ফাঁসির জন্য প্রস্তুত করানো হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে নামাজ পড়ে ফাঁসির জন্য প্রস্তুত হন তিনি। এ সময় তাঁকে তওবা পড়ান ইমাম মনির হোসেন।
কামারুজ্জামানের ফাঁসিকে কেন্দ্র করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় তিনস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারাগারের নিরাপত্তায় ও যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ২০ প্লাটুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গতকালই নেওয়া হয়েছে শামিয়ানা টাঙানোর কাপড় ও বাঁশ। এর আগে গত সোমবার কারাগারে নেওয়া হয় কফিন ও কাফনের কাপড়।
এর আগে আজ দুপুর ২টা ৪১ মিনিটে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছায়। পরে আদেশটি কামারুজ্জামানকে আনুষ্ঠানিকভাবে পড়ে শোনানো হয়।
গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।