বাজেট
পদ্মা সেতুসহ আট প্রকল্পে অগ্রাধিকার
২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে আটটি বড় প্রকল্পকে ‘ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দেওয়া বাজেট বক্তৃতায় এ কথাই জানিয়েছেন তিনি। এই প্রকল্পগুলোকে বলা হচ্ছে প্রবৃদ্ধির জন্য গতির সঞ্চালক।
এই আটটি প্রকল্প হলো : পদ্মা সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, এমআরটি-৬ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প।
এসব প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দুটি সরকারের চলতি মেয়াদে শেষ হবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শুধু পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রতিবছর ০.৫৬ শতাংশ বাড়বে এবং অনগ্রসর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে।’
আট প্রকল্পের সাত কাহন
পদ্মা সেতু প্রকল্প
বর্তমান মহাজোট সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণে ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে সরকার। তবে সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে প্রাক-যোগ্যতা যাচাইকালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের ২৯ জুন চুক্তি বাতিল করে দাতা সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোর পর সেতু প্রকল্পে ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায় অন্য দুই সংস্থা জাইকা ও এডিবি। এরপরই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকার। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর মন্ত্রী, সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেওয়ার পরও বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করায় ২০১২ সালের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে নিজেদের অর্থায়নেরই পদ্মা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১২ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভাতেই দ্রুত নিজস্ব অর্থায়নে সেতুর কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
নানা নাটকীয়তার পর ২০১২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিজেদের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মত হওয়ার কথা জানায় বিশ্বব্যাংক। সেখানে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের বেঁধে দেওয়া শর্তগুলো বাংলাদেশ সরকার পূরণ করায় আবারও এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তারা। অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্তগুলো পূরণের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দুর্নীতির তদন্ত। অবশ্য বিশ্বব্যাংকে প্রকল্পে ফেরানোর জন্য অভিযোগ ওঠার পরপরই মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। ছুটিতে যান সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেইন এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন নিয়ে নানা মহলে নানা বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখ অপর এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য সুরাহা না হলে তারা এ প্রকল্পে কোনো অর্থায়ন করবে না।
এরপর পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত পর্যবেক্ষণ করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর লুই গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্যানেল গঠন করে বিশ্বব্যাংক। একই বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে আসে এই বিশেষজ্ঞ প্যানেল। প্যানেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা বিষয়গুলোর সমাধান চেয়ে এবার বিবৃতি দেয় বিশ্বব্যাংক। জানানো হয়, দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে তারা। এ সময় দুর্নীতির অগ্রগতি জানতে চেয়ে ও এর অগ্রগতি জানিয়ে দুদক এবং বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মধ্যে চিঠি আদান-প্রদান হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে বিশ্বব্যাংকে সময় বেঁধে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যথায় বিকল্প উপায়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।
সেতুর জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করা হয়। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বলা হলেও ভারত থেকে অনুদানে পাওয়া ২০ কোটি ডলার এই প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
২০১৪ সালের ১৭ জুন চীনের রেল মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানির সঙ্গে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নির্মাণের চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৮ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। আর এ জন্য ব্যায় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। একই বছরের ২২ মে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ করতে চীনা এই প্রতিষ্ঠানের দরপ্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এরপর ২ জুন সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডকে কার্যাদেশ দেয় সরকার।
কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে দুইতলাবিশিষ্ট এই সেতুটি নির্মাণ করা হবে। এর ওপরের তলায় থাকবে সড়কপথ আর নিচের অংশ দিয়ে চলাচল করবে রেল। সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগেই যন্ত্রপাতি কেনা ও পরিবহন খরচের জন্য আগাম বিল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে ওক হাজার ৮০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
এরপর ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনের জন্য চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে আট হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকার চুক্তি সই করা হয়।
এখন পর্যন্ত মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্টের সংযোগ সড়কের কাজ, ভূমি অধিগ্রহণ এবং প্রকল্প এলাকার উন্নয়নসহ ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্লট বরাদ্দের মতো প্রকল্পের বেশ কিছু কাজ শেষ হয়েছে। এরপরের ধাপে চলছে বিভিন্ন অংশের মাটি পরীক্ষা ও পরীক্ষামূলক পাইলিংয়ের কাজ।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে এই সেতু নির্মাণ হলে দেশের মোট ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
দেশে বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৯৬১ সালে পাবনার রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার। সে সময় কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও ১৯৭১ সালের পর অর্থের অভাবে পরিত্যক্ত হয়ে যায় এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রকল্পটি নিয়ে নতুন করে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। এরপর ২০১১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিক চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার।
চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়া সরকারের সহায়তায় রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ইউনিট হবে এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। রাশিয়া পারমাণবিক চুল্লির জন্য আজীবন জ্বালানি সরবরাহ করবে এবং এর বর্জ্য তাদের দেশে নিয়ে যাবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু ২০১৩ সালের ১৭ মার্চ। ২০১৭ সালের জুন মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শীতলীকরণ নকশার কাজ শুরু করে রাশিয়ার একটি বিশেষজ্ঞদল। গত মে মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আইন, ২০১৫-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং তা পরিচালনার জন্য একটি কোম্পানি গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিভিন্ন মহলের বিরোধিতার পরেও এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং দ্রুত শেষ করতে ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট হিসেবে এটিকে রাখা হলো।
রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি সুন্দরবনের কাছে হওয়ায় এ নিয়ে নানা বিতর্কের পরেও বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালে এক প্রেসনোটে সরকার জানায়, সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দূরত্ব (১৪ কিমি) এবং ইউনেসকোর স্বীকৃত ন্যাশনাল হেরিটেজ সাইট থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ও উন্নতমানের আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করে এই প্রকল্পের কাজ করা হবে। তাই পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। বরং এই প্রকল্পের ফলে সুন্দরবনের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে আর রক্ষা পারে জীববৈচিত্র্য।
এদিকে ২০১৪ সালে সুন্দরবনের পাশে এমন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করায় উদ্বেগ জানায় জাতিসংঘ। সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কায় শুরু থেকেই প্রকল্পটির বিরোধিতা করে আসছে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনও করে আসছে তারা। তবে সব আন্দোলন আর বিরোধী মতকে উপেক্ষা করে কাজ শুরু হয়েছে রামপালে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের।
গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প
আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সমুদ্রপথের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গভীরতা কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশের দুই প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলায় মাদার ভেসেল ও বড় কনটেইনার নোঙর করতে পারে না। এ অবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।
এ লক্ষ্যে কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ হয়েছে। এখন এই প্রকল্পটি ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্টের আওতায় নিয়ে আসার ফলে আশা করা যাচ্ছে এগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।
এমআরটি-৬ প্রকল্প
সরকারের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পে আওতায় রয়েছে মেট্রোরেল নির্মাণ। ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ-একনেকের সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয় করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ)। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে দেবে পাঁছ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। আর জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা-জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। উত্তরা থেকে ৪০ মিনিটে ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মতিঝিল পৌঁছাবে ট্রেনটি। এর মধ্যে পড়বে ১৬টি স্টেশন। এগুলো হলো উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, হোটেল সোনারগাঁও মোড়, শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা।
মোট ২৮ জোড়া ট্রেন প্রতি চার মিনিট পর পর চলাচল করবে। প্রতিবারে আনুমানিক এক হাজার ৮০০ জন হিসেবে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে দেশের সবচেয়ে দ্রুত এই গণপরিবহন ব্যবস্থা। ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মেট্রোরেল নির্মাণে অ্যালাইনমেন্ট ও ১৬টি স্টেশনের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্টেশন এবং ট্রেন ডিপোর নকশা করেছে বিখ্যাত ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান জন ম্যাকআসলান পার্টনারস-জেএমপি।
প্রকল্প বাস্তবায়নে একে মোট ছয়টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। আটটি দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে ট্রাফিক সার্ভের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে পথের মাটি পরীক্ষাসহ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপের কাজ। এ ছাড়া ডিপো তৈরির জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে উত্তরায় ৪১ বিঘা জমি বুঝে নিয়েছে ডিটিসিএ। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে পরিবেশগত ছাড়পত্র। একই সঙ্গে ট্রেন চালানোর জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সালেই রাজধানীবাসী উপভোগ করতে পারবেন বিশ্বমানের এই পরিবহন সেবা ব্যবস্থা।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে দেশের জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় কক্সবাজারের মহেশখালীতে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সে মেয়াদে এটি করতে না পারায় ২০১৪ সালের শুরুর দিকে অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় এই টার্মিনাল নির্মাণকে রাখা হয়। এই টার্মিনাল তৈরি করা শেষ হলে ২০১৭ সাল নাগাদ এখান থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা যাবে বলে জানা গেছে।
২০১৪ সালের ২৬ জুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করে পেট্রোবাংলা। এরপর এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকল্পের টার্মশিট চুক্তি করা হয়। সিঙ্গাপুরের অ্যাস্ট্রা অয়েল অ্যান্ড এক্সিলারেট কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে এই চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। এই টার্মিনাল নির্মাণের মাদ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে বলে মনে করছে সরকার। এই টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৫০০ ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প
২০১৪ সালের আগস্ট মানে কক্সবাজারের মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। অর্থমূল্যের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প। জাপান সরকারের সহায়তায় এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা ও ধোঁয়া দেখা যাবে না। এই কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট।
পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প
২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে পায়রা বন্দর অধ্যাদেশ ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই বছরই নভেম্বর মানে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের দেশের তুতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই বছরের জানুয়ারি মাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পায়রা বন্দরে কারিগরি পরামর্শক ও ধারণাগত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিংফোর্ডের সঙ্গে চুক্তি করা হয়।