বাজেট
অশোধনীয় আশার বাজেট
আগে বলেছিলেন, ‘আমি উচ্চাভিলাষী শব্দটি পছন্দ করি, এটা শুনতেও আমি অভ্যস্ত।’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিত এবার বললেন, ‘আমি বরাবরই এ দেশের অপরিমেয় সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। আবারও পুনরাবৃত্তি করব যে, আমি অশোধনীয় আশাবাদী।’
টানা ছয়বার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে এবার ৭ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও বেড়েছে বাজেটের আকার।
যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে, সেগুলো ধারাবাহিকভাবে অবাস্তবায়িত থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এই বাজেটটা আরো একটু বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত ছিল। এটা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জের হবে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত মোট নয়বার এবং টানা সপ্তমবার বাজেট পেশ করলেন। আশি ঊর্ধ্ব বয়সী মুহিত আজ বৃহস্পতিবার ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতা করেন বেশ হাস্যোজ্জল মুখে। বক্তৃতার শেষ দিকে তিনি বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, বৈরিতা এবং এক ধরনের নির্বোধ দেশশত্রুতার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সব প্রতিবন্ধকতা তুচ্ছ করে আমাদের কর্মঠ, কষ্টসহিষ্ণু, সাহসী ও প্রাচুর্যে ভরা সাধারণ জনগণ তাঁদের শ্রম, মেধা, প্রজ্ঞা ও আন্তরিকতা দিয়ে এই অগ্রগতির চাকা সচল রেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের এই অগ্রযাত্রা থাকবে নিয়ত সঞ্চলনশীল।’
বাজেটের আকার : দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি
২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা মোট দশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে আকার বেড়েছে ৫৫ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা বা ৮১.২২ শতাংশ। এবার জিডিপি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ শতাংশ। এর আগে ছিল ৭.৩ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬.২ শতাংশ।
ব্যয় : মোট ব্যয়ের মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় এক লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা (৯.৬%) ধরা হয়েছে। আর উন্নয়ন ব্যয় এক লাখ দুই হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা (৬.০%); যার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ৯৭ হাজার কোটি টাকা (৫.৭%)। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যয় ২৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা (১.৬%)।
আয়ের উৎস : দুই লাখ আট হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা (১২.১%) রাজরস্ব আয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা (১০.৩%), এনবিআর বহির্ভূত পাঁচ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা ও কর ব্যতীত প্রাপ্তি থেকে ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ঘাটতি : এবার বাজেটের মোট ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ছিল ৭৬ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা বা ৫ শতাংশ। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা (১৮%) টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা (৩৩%) অর্থায়ন ধরা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা (২.২%) আসবে ব্যাংকিং উৎস থেকে।
সামগ্রিক ব্যয় কাঠামো : বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পাদিত কাজের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী কাজগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো ও সাধারণ সেবা খাত।
এর মধ্যে অবকাঠামো খাতে মোট বরাদ্দের ২৩.৪ শতাংশ, যার মধ্যে মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২০.৪ শতাংশ।
ভৌত অবকাঠামো খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে মোট বরাদ্দের ৩০.৬ শতাংশ। এর মধ্যে মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৩.৯ শতাংশ, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৮.৯ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৬.৩ শতাংশ।
সাধারণ সেবা খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে মোট বরাদ্দের ২৮ শতাংশ। সরকার-বেসরকারি অংশিদারত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ব, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ২.২ শতাংশ। সুদ পরিশোধ বাবদ প্রস্তাব করা হয়েছে ১১.৯ শতাংশ। নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩.৮ শতাংশ।
এডিপি বরাদ্দ : ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মানবসম্পদ (শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) খাতে ২২ শতাংশ, সার্বিক কৃষি খাতে (কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, পানিসম্পদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) ২৫.৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৯.১ শতাংশ, যোগাযোগ (সড়ক, রেল, সেতু এবং যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) খাতে ২২.৩ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১১.৪ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।
সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বরাবরের মতো প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতগুলো অগ্রাধিকার পাবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন যোগাযোগ, বন্দর উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে আটটি প্রকল্পকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, এমআরটি-৬ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও পায়রা সমুদ্রবন্দর প্রকল্প।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগওয়ারি বাজেট বরাদ্দ
শিক্ষা : শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে মোট ৩১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার কিছু বেশি।
স্বাস্থ্য : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ এবার বরাদ্দ থাকছে ১২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। কমিউনিটি ক্লিনিক, টেলিমেডিসিন সেবার সম্প্রসারণ, মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিম ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়নে এ অর্থ ব্যয় হবে। এ আগের অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি : সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ খাতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাবে। তবে গত অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল তিন হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
সমাজ কল্যাণ : ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ৩২৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। আগের অর্থবছরে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ পায় দুই হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।
জনপ্রশাসন : এবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এক হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। আগের অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।
প্রতিরক্ষা : এবার এ খাতে ১৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার : সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে এবার ১৮ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গতবার সংশোধিত বাজেটের এ খাতের বরাদ্দ ছিল ১৭ হাজার পাঁচ কোটি টাকা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে সাত হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। আগের বার ছিল ছয় হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।
পরিবহন ও যোগাযোগ : সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে মোট ১৭ হাজার ৪১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছ। আগের হিসাব বছরে এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য ১৩ হাজার ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
কৃষি : সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে এবার ১২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ : বিদ্যুৎ উন্নয়নের জন্য এবার দ্বিগুণ বরাদ্দ ধরা হয়েছ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছ ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ধরা হয় আট হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
সমগ্র বাজেটের খাতওয়ারি বিভাজন :
সামাজিক অবকাঠামো : ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সামাজিক অবকাঠামো খাতে মোট ৬৯ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ধরা হয় ৬৩ হাজার ৩২০ কোটি টাকা।
এবার প্রস্তাবিত বাজেটের মানব সম্পদ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৭১ কোটি টাকা, যা আগের অর্থ বছরের বাজেটে ছিল ৫৫ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা।
খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এবার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে নয় হাজার ১১২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল সাত হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা।
ভৌত অবকাঠামো : এ খাতে এবার ৯০ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৮ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা।
কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের জন্য সামগ্রিকভাবে ৪০ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের বার ছিল ৩৭ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
বিদ্যু ও জ্বালানি খাতে মোট ১৮ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের বার ছিল নয় হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা।
আর যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে সামগ্রিকভাবে এবার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে মোট ২৬ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা, যা আগের বার ছিল ১৮ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।
সাধারণ সেবা : এ খাত বরাদ্দ পাচ্ছে ৮২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৫৭ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা।
এবারের বরাদ্দের মধ্যে জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ১৩ হাজার ৬৩০, সুদ পরিশোধ ৩৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা ও নিট ঋণ ও অন্যান্য ব্যয় ১১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।
বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন কোনো পরিবর্তন এসে পড়েনি যে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। যে আকারটা নির্ধারণ করছি, সেই আকারটার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ আমি সংগ্রহ করতে পারব কি না সেটা দেখতে হবে। আর যদি অর্থ সংগ্রহ করতে পারি, তাহলে সেটা বাস্তবায়নের জন্য যে আমার প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দরকার, সেটা কাছে আছে কি না তাও দেখতে হবে। সেটা যদি না থাকে তাহলে তখন এটাকে উচ্চাভিলাষী বলা যেতে পারে। আমি মনে করি, এই দৃষ্টিকোণ থেকে এ বাজেটও উচ্চাভিলাষী বাজেট।’
এক লাফে লক্ষ্যমাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এক লাখ ৩৫ থেকে আমি এক লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকার টার্গেটে যাচ্ছি। অ্যানালাইসিস করে দেখেছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো বছর ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়নি। তো হঠাৎ করে আমার এমন কী বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে দেশে যে, আমি এইটা ৩০ শতাংশ নিয়ে যেতে পারব?’
প্রস্তাবিত বাজেট আরো বাস্তবসম্মত হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশে ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাস্তবায়নের দিকটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ওইদিক থেকে দেখতে গেলে বাজেটটা আরেকটু বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত ছিল। কারণ এক বছরের মধ্যে আমাদের সক্ষমতা রাতারাতি বাড়বে না।’
প্রবৃদ্ধির হারকে বাড়াতে ব্যক্তি খাতকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি আরো বলেন, ‘এখন চ্যালেঞ্জটা হলো, এই প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতকে সবচয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে। আমি বিরাট কিছুকে দেখি না- যে কারণে এ খাত উজ্জীবিত হবে।’
বিএনপি :
বিএনপি নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকার অনির্বাচিত। চলছে লুটপাট। লুটপাটের কারণে কারো শাস্তি হচ্ছে না। জনগণের করের টাকা দিয়ে বাজেটের ঘাতটি পূরণ করা হচ্ছে।’
দেশে ব্যক্তি খাতে কোনো বিনিয়োগ আসছে না মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ছাড়া তো কোনো প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব না। ব্যক্তি খাত কেন বিনিয়োগ করবে? ব্যক্তি দেখছে, দেশে কোনো নির্বাচিত সরকার নাই। আইনের শাসন নাই।’
সরকারি বিনিয়োগের মধ্যে ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে। অনিয়মের কারণে এটা দেশের মানুষের কোনো কাজে আসছে না বলে মনে করেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সিপিডি :
এবারের বাজেটে বিভিন্ন খাতে আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এনটিভিকে তিনি বলেন বলেন, ‘বাজেট ছোট, বড় হয়েছে, উচ্চাভিলাসী হয়েছে এগুলো আমরা একবারও বলছি না। আমরা বলছি এই বাজেট প্রয়োজন। কিন্তু এর অর্থায়নের জন্য আপনি কোনো বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা দিচ্ছেন না। আর যেসব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সেগুলো ধারাবাহিকভাবে অবাস্তবায়িত থেকে যাচ্ছে। আমাদের কষ্টের, দুর্বলতার দিকটি হলো, বাজেট এলে পরে আমরা পরবর্তী বাজেট নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। গত বাজেটগুলো কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে একবারও আলোচনা করি না।’
এফবিসিসিআই :
২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। বাজেটকে দেশীয় শিল্পবান্ধব বলে আখ্যা দিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনের নব নির্বাচিত সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, ‘সরকার চাইছে স্থানীয় শিল্প উঠে দাঁড়াক।’ আজ বৃহস্পতিবার মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘বাজেট দেশীয় শিল্পবান্ধব হয়েছে। যেসব ফ্যাক্টরগুলো আমাদের নতুন শিল্প করার বাধা, যেমন ভূমি, বিদ্যুৎ, গ্যাস- আজকে অর্থমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে, উনি আমাদেরকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেবেন। উনি বলেছেন, বিদ্যুতে আর কোনো সমস্যা নেই, সমাধান হয়ে গেছে।’