বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে যত দুশ্চিন্তা
বছরের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও বিরতি কাটিয়ে ফেরা, দুটোই জয়ে রাঙিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটিতে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স কতটুকু স্বস্তির?
তারুণ্য নির্ভর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বল হাতে পুরোনো ছন্দে দেখা গেছে মুস্তাফিজুর রহমানকে। কিপটে বোলিং আর উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ জানান দিয়েছেন ধার কমেনি তাঁর কাটারের। নিষেধাজ্ঞার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান ফিরেছেন রাজার মতো। এক বছরেরও বেশি সময় পর খেলতে নেমে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। ক্যারিবীয়দের তুলে নেওয়া ১০ উইকেটের চারটিই তাঁর। ৭.২ ওভারে দিয়েছেন মাত্র আট রান।
আরেক তরুণ মুখ হাসান মাহমুদ অভিষেকে বুঝিয়েছেন, লম্বা রেসের ঘোড়া হতে যাচ্ছেন তিনি। অভিষেক ম্যাচে নিয়েছেন তিন উইকেট। সব মিলিয়ে বোলিং বিভাগ নিয়ে স্বস্তির বাংলাদেশ শিবিরে। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা খুব একটা মেলে ধরতে পারেননি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ বোলারদের সামনে সাবলীল ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ১২৩ রান তুলতে ৩৩.৫ ওভারে লেগেছে স্বাগতিকদের। উইকেট হারাতে হয়েছে চারটি। অভিষেকে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন ক্যারিবীয় বোলার আকিল হোসেন। সফরকারীদের নেওয়া চার উইকেটের তিনটিই তাঁর।
ইনিংসের শুরুতে ধীরে শুরু করা তামিম ইকবাল ও লিটন দাসকে ছন্দে দেখা যায়নি। লিটন ১৪ তুলতে খেলেছেন ৩৭ বল। খুব দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়েছেন তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। আট বল মোকাবিলা করার পর টাইমিং মেলাতে না পেরে ফিরেছেন শান্ত (১)।
ওপেনিংয়ে নেমে ধীর গতিতে উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন তামিম। ম্যাচ শেষ করে আসতে পারতেন অধিনায়ক। কিন্তু সে সুযোগ আর হয়নি। আগ বাড়িয়ে ব্যাট চালাতে গিয়ে নিজের ভুলে স্টাম্প হন তিনি। ৪৩ বল খেলা সাকিবও পারেননি নিজের ব্যাটিংয়ে ছাপ রাখতে। রানের খরায় থাকা সাকিব স্পিনের কাছেই পরাস্থ হন। সব মিলিয়ে ব্যাটিংয়ে বেশ জড়তা দেখা যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় সারির এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তামিম-সাকিবদের। নিজেদের চেনা মাঠ, চেনা উইকেটে ১২৩ রান তুলতে বাংলাদেশ খেলেছে ১৩৯টি ডট বল। ওভার প্রতি রানরেট ৩.৬৯। স্বাভাবিকভাবে জয়ের স্বস্তির মাঝে ওঠে আসে ব্যাটিংয়ে অস্বস্তির প্রশ্ন!
ম্যাচ শেষে কারণ হিসেবে উইকেটকে দায়ী করেছেন সাকিব। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলটিকেও সহজ প্রতিপক্ষ বলে মনে করেন না তিনি। বলেছেনও সাকিব, ‘উইকেট খুবই কঠিন ছিল। হয়তো অভিজ্ঞতার কারণে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তার মানে এই না যে, আমরা সামনের দুই ম্যাচ আরামে জিতে যাব। আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আর ওদের দল নিয়ে আপনাদের চিন্তা সম্পূর্ণ ভুল। ওরা সব সময় ভালো দল। আমরা সব সময় ওদের সম্মান করি। তারা ভালো ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য রাখে।’
উইকেট এবং আবাহাওয়াকে দায়ী করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। ব্যাটিংয়ের চিত্র নিয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘পিচটা স্পোর্টিং ছিল না তেমন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমার মনে হয়, ধীর গতির ছিল উইকেট। সাকিব ছাড়া বাকিরা যে ব্যাটিংয়ে খুব ভালো করছে সেটা কিন্তু নয়। তাই বলব, ফর্মে ফিরতে একটু সময় লাগবেই।’
গতকাল বুধবার সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে ছয় উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামীকাল শুক্রবার হবে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে। ম্যাচটি দিয়ে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়ে নিশ্চিতভাবে চেনা ছন্দে ফিরতে চাইবেন তামিম-লিটনরা।