অভিমান করে বাড়িছাড়া বৃদ্ধ, পরিবারে ফিরিয়ে দিল পুলিশ
পরিবার ঠিকমতো খাবার ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না- এমন অভিমানে ঘর ছেড়ে বের হয়ে যান ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবুল হাসেম। ঠাঁই হয় রাস্তার ফুটপাতে। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পেতেন তাই দিয়ে দিন গুজরান করতেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই চিকিৎসার অভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে দুই সমাজকর্মী ও কুমিল্লার লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মানবিক উদ্যোগে সেই বৃদ্ধ আবার পরিবারে ফিরে গেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল হাসেম নয় দিন আগে ঘর ছাড়েন। নিজের ওষুধ ও খাদ্য কেনার টাকা সংগ্রহ করতে পাশের লাকসাম পৌর শহরে সারাদিন ঘুরে বেড়াতেন। রাতে রাস্তার পাশেই ফুটপাতে ঘুমিয়ে যেতেন। হাত পেতে পাওয়া টাকায় পেট চললেও ওষুধ কিনতে পারতেন না। পাঁচ-ছয় দিন পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পা ফুলে যায়। বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে পচন ধরে। স্ট্রোকের কারণে আগেই ডান হাত একটু বাঁকা ছিল।
গতকাল বুধবার দুপুরে অসুস্থ এই বৃদ্ধকে শহরের রাজঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করে লালমাই থানায় পৌঁছে দেন দুই সমাজকর্মী। থানায় পৌঁছে বৃদ্ধ নিজের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে পুলিশকে জানান, পরিবার তাঁকে অবহেলা করে। সে কারণে তিনি অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন।
গতকাল বুধবার বিকেলে বৃদ্ধের বড় ছেলে নূর হোসেনকে (২২) থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। তিনি জানান, তিনি পৈত্রিক জমিতে কৃষিকাজের পাশাপাশি টিউশনি করে সংসার চালান। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার দরবেশ মার্কেটে নিজেদের একটি দোকান ছিল। আবুল হাসেম ২০১৭ সালে স্ট্রোক করার পর সেই দোকানটি এক হাজার টাকায় ভাড়া দিয়ে দেন। ছোট এক বোন ও এক ভাই স্কুলে পড়াশোনা করে, তাদেরও খরচ যোগাতে হয়।
নূর হোসেন পুলিশকে আরও বলেন, স্ট্রোকের পর তাঁর বাবার ডান হাত ও ডান পা কিছুটা অবশ হয়ে যায়। ডান হাতের কবজি বাঁকা হয়ে যায়। তখন থেকেই তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের মা অসুস্থ বাবাকে সেবাযত্ন করেন। কিন্তু পরিবারের প্রতি তাঁর বাবা সন্তুষ্ট না।
নূর হোসেন আরও বলেন, তাঁর বাবা এর আগেও একবার নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে পরিবারের লোকজন তাঁকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসে। এবারও বাড়ি ছাড়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজা হয়েছে বলে জানান তিনি
তবে নূর হোসেন পুলিশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভবিষ্যতে তিনি বাবার প্রতি আরও যত্নশীল হবেন। ভরণ-পোষণ ও ওষুধের ব্যাপারে অবহেলা করবেন না এবং সেবা-যত্নেও ত্রুটি হবে না। এর পরই পুলিশ ছেলেকে সতর্ক করে দিয়ে আবুল হাসেমকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়।
এ ব্যাপারে সামাজিক সংগঠন ‘উদ্দীপন’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইউনিভার্সেল কামাল বলেন, দুজন সমাজকর্মী ও লালমাই থানার ওসির সহায়তায় বৃদ্ধ আবুল হাসেমকে পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, ‘লাকসামের ভিক্টোরি অব হিউম্যানিটি অরগানাইজেশনের দুজন সমাজকর্মী বৃদ্ধকে রাস্তা থেকে ধরে থানায় নিয়ে আসেন। পরে আমি তাঁর ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ ও কাউন্সেলিং করি। ছেলে সব দায়িত্ব নিয়ে বাবাকে পরিবারে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। বৃদ্ধের ভরণ-পোষণ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করতে স্থানীয় একজন গণমাধ্যমকর্মীকে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রয়োজনে বৃদ্ধের ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসায় সহযোগিতা করা হবে।’