‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ আগে মার্কেট-ব্যাংকে ‘ঈদের ভিড়’
এ যেন ঈদের কেনাকাটা। ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হওয়ার দুদিন আগে রাজধানীতে কেনাকাটার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন মানুষ। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে অনেকে মার্কেটে গেছেন তুচ্ছ জিনিস কেনার জন্যও। শপিং সেন্টারে মানুষের এই স্রোতে রাজধানীতে দিনভর ছিল তীব্র যানজট। সপ্তাহের প্রথম দিন ভিড় ছিল ব্যাংকপাড়াতেও। দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে মানুষকে টাকা উত্তোলন করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ দিয়েছেন গ্যাস-বিদ্যুতের বিলও।
আজ রোববার রাজধানীর প্রধান প্রধান বিপণিবিতানে ঘুরে জনসমাগমের এই চিত্রই দেখা গেছে। মানুষের ভিড় ঠেলে সামনে পা ফেলাই কঠিন, এমন পরিস্থিতিতে গায়ে গা ঘেঁষে কেনাকাটার ব্যস্ত ক্রেতারা। গাউছিয়া, চাঁদনী চক, হকার্স মার্কেটসহ নিউমার্কেটের আশপাশের সব মার্কেটের দৃশ্যই এক।
ফুটপাথ তো বটেই, মার্কেটের ভেতরেও গাদাগাদি মানুষে। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাওয়া বিক্রেতাদের যেন সময় নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার। দোকানের সামনে টেলিভিশনের ক্যামেরা দেখে অনেককেই দেখা গেল তড়িঘড়ি করে মুখে মাস্ক পরতে।
এর মধ্যে নিউমার্কেটের একটি দোকানের একজন বিক্রেতা (২৫) জানালেন, তিনি মাত্রই বাইরে থেকে এসেছেন। তাই, একটু মাস্ক খুলে রেখেছিলেন।
একই দোকানের অপর কর্মচারী (৩০) অবশ্য বললেন, ‘মাস্ক পরে কতক্ষণ কথা বলা যাবে। দোকানে তো সবসময় কথা বলতে হয়।’
আর মার্কেটের বাইরে জীবাণুনাশক টানেল বসানো হলেও কেউ তা ব্যবহার করছেন, কারোর আবার রয়েছে অনীহা। তবে কাছে গিয়ে জানা গেল টানেলটিই অকেজো।
সেখানে দায়িত্বরত শাহ আমিন (২৫) নামের এক নিরাপত্তাকর্মী এনটিভিকে বলেন, ‘টানেলটা আপাতত নষ্ট। দুপুর ২টায় ঠিক করা হবে, তারপর এর ভেতর দিয়ে লোকজন যাতায়াত করবে।’
এর মধ্যে একজন ক্রেতা (৫৫) বলেন, ‘ভিড়ের কারণ হইল, দুদিন পরে লকডাউন আসতাছে। সেই সুযোগে একটু কেনাকাটা করে রাখা। রমজানে তো বের হওয়া যায় না। তাই আরকি!’
আরেকজন নারী ক্রেতা বলেন, ‘আবার তো লকডাউন দিয়ে দিচ্ছে, তাই আসছি। হালকার মধ্যে কেনাকাটা করে চলে যাব।’
‘আমি মার্কেটিংয়ে ভিড়ের মধ্যে আসছি কারণ কোন সময় কোনটা বন্ধ হয়ে যাবে তার তো কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। বাচ্চাকাচ্চাদের তো বুঝ দিতে হইব, থামাইতে হইব।’, যোগ করেন আরেকজন ক্রেতা (৫০)।
আরেকজন তরুণী জানালেন, তিনি ঈদের কেনাকাটা করতেই মার্কেটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদ দেরি আছে, ঠিক আছে। কিন্তু লকডাউন তো চলে আসতাছে। যত তাড়াতাড়ি পারি কেনাকাটা করে চলে যাব।’
মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মানার এই যখন অবস্থা; মানুষের তাড়া যেন অনেকটা শেষ সময়ের কেনাকাটার সময়টুকু কাজে লাগানো। কাউকে কাউকে তো দেখা গেল হেয়ারব্যান্ড, কানের দুল, পায়েলের মতো জিনিসও কিনতে।
অভিজাত বিপণিবিতানসহ রাজধানীর প্রায় সব শপিং সেন্টারেই উপচেপড়া ভিড় ছিল রোববার। মার্কেটে ছুটে চলা মানুষের এই স্রোতের প্রভাব পড়ে রাস্তায়। শুধু মার্কেটের আশপাশের নয় রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।
এদিকে করোনা মহামারির চলমান পরিস্থিতিতে সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার ব্যাংকগুলোতেও ভিড় ছিল উল্লেখ করার মতো। প্রখর রোদ ও গরমে ব্যাংকে ভিড় করেছেন গ্রাহকরা। কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় জায়গা স্বল্পতার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু কিছু ব্যাংকের শাখায় লাইন করে গ্রাহকদের ব্যাংকে প্রবেশ করতেও দেখা গেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, সপ্তাহের প্রথম দিন আর লকডাউনের ঘোষণার কারণে অন্য দিনের তুলনায় টাকা তোলার চাপ বেশি। উদ্বিগ্ন গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রাখছেন। অনেককে দেখা গেছে, ক্রেডিট কার্ডের বিল দিতে। কেউ আবার বিদ্যুৎ, গ্যাসের বিল দিতে এসেছেন ব্যাংকে। আবার কেউ কেউ টাকা তুলে রাখছেন।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবার ও পরদিন মঙ্গলবার দেশের সব ব্যাংকে লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
করোনার সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এই হিসাব মাথায় নিয়ে সরকার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে সোমবার প্রজ্ঞাপন আসতে পারে বলে সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, এখন যেটা চলছে সেটাকে লকডাউন বলেন আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ বলেন; তা চলছে খুবই ঢিলেঢালাভাবে। এভাবে আসলে করোনা পরিস্থিতিকে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তাই সরকার সর্বাত্মক লকডাউনের পথে যাচ্ছে।
বর্তমানে সব ধরনের গণপরিবহন চলছে। বাজার, শপিংমল খোলা। অফিস–আদালত, ব্যাংক, বিমা সবকিছুই খোলা। বেসরকারি খাতের সবকিছুই খোলা। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এসব কোনো কিছুই চলবে না। অর্থাৎ সব কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে।