আবরার হত্যা : ২৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলায় ২৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আজ রোববার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের আদালতে যুক্তিতর্ক শুনানির সময় আবরার হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল এই আর্জি জানান।
শুনানিতে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, বিজ্ঞ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আসামিরা একজন ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডে কান্না করেছে আবরারের পরিবার, কেঁদেছে পুরো জাতি। তারা সবাই শিক্ষিত। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি। তিনি আরও বলেন, এদিন যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ না হওয়ায় আগামীকাল আবারও যুক্তিতর্ক শুনানি হবে। এরপর আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হবে।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা যুক্তিতর্কের শুনানিতে বলেন, মাননীয় আদালত এ মামলায় ৪৬ জন সাক্ষী রয়েছে। এবং সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৯ জন। এই সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা আদালতে পর্যালোচনা করা হলো।
আবু আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ঘটনাস্থল শেরেবাংলা আবাসিক হলের ১০১১, ২০১১, ২০১০, ২০০৫ নম্বর রুমসহ প্রথম তলা থেকে দ্বিতীয় তলা উঠার ল্যান্ডিং স্থানে মৃতদেহ ফেলে রাখা এবং মৃতদেহ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য স্ট্রেচারে রাখা ও মৃতদেহ স্ট্রেচারের উপর চাদর দিয়ে ঢেকে রাখাসহ মৃতদেহ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের চাপ সৃষ্টি করার বিষয়গুলি দালিলিক ও নিরপেক্ষ সাক্ষীর মাধ্যমে মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা।
এ মামলায় আসামিরা হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, উপসমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
আসামিদের মধ্যে মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক। বাকি ২২ জন গ্রেপ্তার আছেন। এ মামলায় আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলার বিচারকাজ অনেকদিন বন্ধ ছিল।