ক্লাইভ লয়েডের খোলা চিঠি
ভারতের বিপক্ষে ১৯৬৬ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্লাইভ লয়েডের। সিমু নার্সের আঙুলে ইনজুরির কারণে হুট করেই দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেই সুযোগ ভালোভাবে কাজেও লাগিয়েছিলেন তিনি। দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৮২ ও ৭৮ রান করেন তিনি। তাঁর অসাধারণ সাফল্যে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহে শীর্ষ পাঁচে ছিলেন তিনি।
হঠাৎ সুযোগ পেয়ে, সেটি ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন ক্লাইভ। দলের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই নয়, অধিনায়ক হিসেবেও দারুণ সব সাফল্য পান ক্লাইভ। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নিজের অভিষেকের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ সফরে আসা তরুণদের কাছ থেকেও এমন কিছু আশা করছেন ক্লাইভ। করোনাভাইরাস আতঙ্ক ও ব্যক্তিগত কারণে এবারের বাংলাদেশ সফরে আসেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সেরা ১২ ক্রিকেটার। তাঁদের পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছেন বেশ কয়েজন নতুন মুখ।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবরে জানা গেছে, সিরিজ শুরুর আগে বর্তমান দলের প্রতি খোলা চিঠি লিখেছেন ৭৬ বছর বয়সী লয়েড। সেই চিঠির পুরো অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো :
প্রিয় ছেলেরা,
আমি বুঝতে পারছি, এমন একটা সফর তোমরা শুরু করতে যাচ্ছ, এমন সফরের জন্য তোমরা হয়তো প্রস্তুত নও। তোমাদের মনে হতে পারে, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ করে কঠিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার সবাই এটাও আশা করছে, তোমরা লড়াই করবে—সাফল্যও এনে দেবে।
তোমাদের বিষয়টা এমনভাবে নেওয়া উচিত, এটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে শূন্যস্থান পূরণের ব্যাপার নয়, নিজেদের জায়গা পাকা করার সুযোগ। যোগ্যতার ভিত্তিতেই তোমরা সুযোগ পেয়েছ। এটা তোমাদের সুযোগ। বিশ্বকে নিজের প্রতিভা, দক্ষতা দেখানোর চমৎকার এক উপায়। সবাইকে দেখানোর সুযোগ যে, তোমরা দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটার নও, তোমরাও শীর্ষ সারিতে উঠে আসতে পার।
১৯৬৬ সালে আমি মূল টেস্ট দলে ছিলাম না। অপ্রত্যাশিতভাবে, প্রথম টেস্ট শুরুর ৪৫ মিনিট আগে নার্সের ইনজুরিতে দল থেকে আমাকে জানানো হয়, আমি খেলছি। এরপর টানা ৩৫ টেস্ট খেলেছিলাম। কারণ, আমি ভালো করেছিলাম। আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম, নিজের প্রতিভা ও সামর্থ্য দেখানোর এটাই সুযোগ। আর সেই সুযোগ আমি দুই হাতে কাজে লাগিয়ে ছিলাম। এর চেয়েও বড় কথা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য খেলতে পারাটা সবচেয়ে বড় সম্মানের। আমি সেই সময়েও সেটিই বিশ্বাস করতাম, এখনো করি।
তোমরা যে দলে ডাক পাওয়ার উপযুক্ত, এটা প্রমাণের সুযোগ তোমাদের সামনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি ও ক্যাপ পরতে পারার জন্য তোমাদের গর্বিত হওয়া উচিত। তোমরা অন্যতম সেরা ক্রিকেট জাতির প্রতিনিধিত্ব করছ, যে দলটির রয়েছে ঈর্ষণীয় সব রেকর্ড। এটি নিয়ে আমরা গর্বিত। মনে রেখ, আমরা কেবল ৫০ লাখের একটু বেশি জনসংখ্যার এক জাতি।
আমাদের রেকর্ডের একটি হলো, টানা ২৯ ম্যাচ অপরাজিত থাকা। টানা ১১ ম্যাচ জয়। টানা ১৭ বছর ধরে একটি টেস্টও হারিনি আমরা।
এগুলো অতীতের কীর্তি ও অর্জনের ক্ষুদ্র একটি অংশ। যা অর্জনের পেছনে কঠোর পরিশ্রম ও নিবেদন লুকিয়ে আছে। আমি বলব, তোমাদের নিজেদের ফিটনেসের দিকে গভীর মনোযোগ দিতে। ব্যাটসম্যান বা বোলার যাই হও, সব সময় নিজের টেকনিক ও স্কিল গড়ার চেষ্টা করবে। আমাদের দল অতীতে ঠিক এমনই করেছিল এবং আমার বিশ্বাস, তোমরাও তাই করবে।
তোমাদের সামনে আমাদের টেস্ট র্যাঙ্কিং উন্নতি এবং আমাদের ক্রিকেটে গর্ব করার মতো আরো কিছু সুযোগ থাকছে। এই প্রত্যাশা শুধু আমার নয়, পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের।
তোমাদের কাছে বাংলাদেশ সফর ভীতিকর মনে হতে পারে। তবে তা কঠিন নয়। এটিই তোমাদের জন্য সেরা একটি সুযোগ। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের অধীনে তোমরা নিজেদের পেশাদারত্ব, তারুণ্য ও জয়ের আকাঙ্ক্ষা দিয়ে নতুন যুগের সূচনা করতে পার। তোমাদের যা বলছি, তা কোনো অমূলক কথা নয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। যখন আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দায়িত্ব নিই, এর আগে আমরা ২০ টেস্ট হেরেছিলাম। নতুন করে লক্ষ্য স্থির করেছি, কারণ দল পুনর্গঠনের প্রয়োজন ছিল। আমার দলেও অনেক নতুন ক্রিকেটার ছিল। কিন্তু আমার দল চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হয়নি, শেষ পর্যন্ত আমরা সাফল্যের চূড়ায় উঠেছিলাম। আমার বিশ্বাস, তোমরাও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রয়োজনীয় পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে পারবে। আমরা করতে পেরেছিলাম কারণ, নিজেদের ওপর বিশ্বাস ছিল। তোমরাও পারবে। আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের প্রথম ধাপ।
তোমাদের একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, সাফল্যের চূড়ায় উঠতে হলে সেই মানসিকতা থাকতে হবে। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। আমি নিশ্চিত, এই সফরে তোমরা তেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে।
শেষে বলি, তোমাদের জন্য আমার শুভ কামনা। মনে রেখ, বেশির ভাগ মানুষকে বিচার করা হয় তাদের পেরিয়ে যাওয়া বাধার ভিত্তিতে।