বাইশ গজে রাজার পুনর্জন্ম!
রিকি পন্টিং টুইট করেছেন, সে জানে কী করতে হবে, কখন করতে হবে! ম্যাচ শেষে তিনি নিজেও বললেন, পন্টিং আমাকে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। খেলা শুরুর আগে আমি দেখেছি। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে তাঁর বার্তা।
বলা হচ্ছে বাইশ গজে পুনর্জন্ম নেওয়া সিকান্দার রাজার কথা। জিম্বাবুয়ের পাড়ায় পাড়ায়, অভিজাত অট্টালিকায় যাকে নিয়ে এখন উল্লাসে ভাসার প্রতিযোগিতা চলছে। যাকে নিয়ে পুরো ক্রিকেট দুনিয়া ধন্য ধন্য রব তুলছে। একটা দলের পুণর্জন্মে যার অবদান সবচেয়ে বেশি! আটপৌরে জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার থেকে সেরাদের কাতারে উঠে আসা রাজাকে দুহাত ভরে দিচ্ছেন ক্রিকেট বিধাতা!
সিকান্দার রাজার ক্যারিয়ারের দুটো ভাগ। ২০১৯ এর আগে, ২০১৯ এর পরে। ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে নেমে আসে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। আর দশজনের মতোন রাজাও নিজের শেষ দেখে ফেলেছিলেন। ভেবেছেন, মাঠ থেকে বুঝি বিদায় নিতে পারবেন না! ভাগ্যিস ভাবনাতে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। অবসরটা নেননি। নইলে ক্রিকেট দুনিয়া চমৎকার এক ফিরে আসার গল্প দেখা থেকে বঞ্চিত হতো।
সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে উৎসবের দিন খুব বেশি আসে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসর সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দিচ্ছে। ভক্তরাও নিশ্চয়ই তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন। ক্রিকেট দলগত খেলা। দশে মিলে জয়ের মানসিকতা পোষণ করলে তখন ধরা দেয় বিজয়। সেই বিজয় হতে পারে মাঠের খেলায়, মাঠের খেলার পিছিয়ে গেলে হতে পারে অদম্য স্পৃহায়। দরিদ্র একটি জাতির কাছে প্রতিটি দিনই লড়াই। তেমন একটি দেশের প্রতিনিধি হয়ে রাজারাও রোজ রোজ লড়াই করেন। অন্তরে পোষণ করেন, হারার আগে হারতে নেই!
এবারের আসরের গ্রুপপর্বে জিম্বাবুয়ে দুটো ম্যাচ জিতেছে। দুটিতেই ম্যাচসেরা সিকান্দার রাজা। মূলপর্বে প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যায়, পরেরটিতে পাকিস্তানকে এক রানে হারিয়েছে। সেখানেও ম্যাচসেরা রাজা। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে নিজের সাম্রাজ্য বানিয়ে ফেলা ৩৬ বছরের রাজা কয়েক বছর আগেও ছিলেন গড়পড়তা মানের ক্রিকেটার। নিজেকে ভেঙেচুরে এখন হয়ে উঠেছেন দলের তো বটেই, সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। দ্বিতীয় জীবন তো একেই বলে।
গতকালের ম্যাচে শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ১১ রান। ৪ বলে সমীকরণ ৪ রানের! পাকিস্তান নিতে পারেনি। মূলত, জিম্বাবুয়ে নিতে দেয়নি। দাঁত কামড়ে লড়ে গেছে। খুব সামান্য পুঁজি নিয়ে জয় বের করে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে জিতলে তবেই এমন ম্যাচ বের করা সম্ভব। রাজারা বুঝিয়ে দিলেন, দলটা বড়দের কাছে প্রতিনিয়ত হারতে পারে, কিন্তু মন ও মগজে সবসময় জয় ধারণ করেন তারা!
রিকি পন্টিং ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তি। তিনি জানেন, তিনি চেনেন। রাজার রাজত্ব ঠুনকো নয়, তা বুঝেছেন সকলের প্রিয় পান্টার। বাকিরাও স্বীকারে কার্পণ্য করছে না। অনেকগুলো খারাপ দিনের সঙ্গে যুদ্ধ করে আজকের অবস্থানে আসা সিকান্দার রাজা হতে পারেন পিছিয়ে পড়াদের জন্য দুর্দান্ত এক কেইস স্টাডি। যাকে পড়তে পড়তে শেখা যাবে কীভাবে পুনর্জন্ম নিতে হয়!