শেষ দিনে বাংলাদেশের জিততে চাই সাত উইকেট
হারারে টেস্টের চতুর্থ দিন দারুণভাবে পার করল বাংলাদেশ দল। দুই টপ অর্ডার নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে বিশাল চ্যালেঞ্জ দিয়েছে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিকরা আজ ১৪০ রান করে দিন শেষ করেছে। বিপরীতে স্বাগতিকদের তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন সাকিব-মিরাজরা। আগামীকাল রোববার শেষ দিনে জিম্বাবুয়েকে হারাতে বাংলাদেশের চাই ৭ উইকেট। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের চাই আরও ৩৩৮ রান।
আজ শনিবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দুই উইকেট হারিয়ে ১৪০ রানে দিন শেষ করেছে জিম্বাবুয়ে। দিন শেষে উইকেটে ১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন দিয়ন। তাঁর সঙ্গে ৭ রানে ব্যাট করছিলেন তিরিপানো। বাংলাদেশ এখনো ৩৩৭ রানে এগিয়ে আছে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশকে ভালো সংগ্রহ এনে দিয়েছেন টপ অর্ডাররা। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁরা দুর্দান্ত করেছেন। সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত — তিনজনই পেয়েছেন রানের দেখা। এরই মধ্যে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন সাদমান ও শান্ত। জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮৪ রান তুলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের লিডসহ বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে উঠেছে ৪৭৬ রান।
গতকাল শুক্রবার দিনের শেষভাগে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালোভাবে সামাল দিয়েছেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলাম। আজ টেস্টের চতুর্থ দিনও এই দুই ওপেনারে ভর করে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। ভালো শুরু এনে দিয়ে ফিরে গেছেন সাইফ। ৪৩ রানে আউট হয়েছেন তিনি। তবে সাইফ ফিরলেও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন সাদমান। ১৭৯ বলে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেলেন সাদমান।
সাদমানের পর শতকের দেখা পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই সেঞ্চুরিতে ভর করেই এই সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন সাদমান। ১৯৬ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল নয়টি বাউন্ডারি। অন্যদিকে আরেক সেঞ্চুরিয়ান শান্ত অপরাজিত ছিলেন ১১৭ রানে। ১৮৮ বলের ইনিংসে পাঁচ বাউন্ডারি ও ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
কাল দিনের শুরুটা হয়েছিল হতাশা দিয়ে। প্রথম সেশনে বাংলাদেশি বোলারদের পরীক্ষা নিয়েছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু সময় গড়াতেই ম্যাচের রূপ বদলাতে থাকে। স্পিনে জাদু দেখাতে থাকলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। দুজন মিলেই নিয়েছেন স্বাগতিকদের নয় উইকেট। ফলে বেশি দূর যেতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। বিপরীতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে একটি উইকেটও হারায়নি বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে হারারে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে স্বস্তিতে ছিল মুমিনুল হকের দল।
টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ১৯২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেছেন কাইতানো। কাল ওপেনিংয়ে নেমে আজ দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়েছেন তিনি। আক্রমণাত্মক খেলেছেন ব্রেন্ডন টেইলরও। ওয়ানডাউনে নেমেই ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিংয়ে করেন ব্রেন্ডন টেইলর। মারকুটে ব্যাটিংয়ে আগাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির পথে। কিন্তু শতকের ঘরে পৌঁছানোর আগেই টেইলরের প্রতিরোধ ভাঙলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯২ বলে ৮১ রানে ফিরলেন টেইলর। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১২ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়।
মিরাজের পর বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন সাকিব। চারে ব্যাট করতে নামা দিয়ন মায়ার্সকে ফিরিয়ে দিলেন তিনি। এরপর ফিরিয়ে দেন মারুমাকে। সাকিবের সঙ্গে স্পিনে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন মিরাজ। কাইতানো, ডোনাল্ড তিরিপানো, ব্রেন্ডন টেইলর, মুজারবানিকে ভিক্টরকে নিজের শিকার বানান মিরাজ।
৮২ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে মিরাজই হয়েছেন সেরা বোলার। সমান রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলার সাকিব। তাসকিন নিয়েছেন একটি উইকেট।
গত বৃহস্পতিবার টেস্টের দ্বিতীয় দিন ভালো কেটেছে বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহর দেড়শ রানের ইনিংস এবং তাসকিনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে লড়াই করার বড় পুঁজি পেয়েছে সফরকারীরা।
এর আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৫০ রান করেছেন ১৬ মাস পর টেস্টে ফেরা মাহমুদউল্লাহ। এটাই টেস্টে তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ ছিল ১৪৬ রান।
ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্ট খেলতে নেমে পঞ্চম সেঞ্চুরি করেছেন মাহমুদউল্লাহ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরে শেষ নিজের ৪৯তম টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কাল মাঠে নেমে দিনের ১৭ ও ইনিংসের ১০০তম ওভারে পরপর জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শতক করলেন তিনি। সেঞ্চুরি করতে মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ১৯৫ বল। যেখানে ছিল ১১ চার ও একটি ছক্কার মার।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তাসকিন আহমেদও দারুণ খেলেছেন। যেখানে দলের নিয়মিত ব্যাটসম্যানেরা ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে এই পেসার যেন বনে যান পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত করেছেন ৭৫ রান। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ১১ বাউন্ডারি দিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৬৮, ৬৭.৪ ওভারে ২৮৪/১ (ডি.)(সাদমান ১১৫*, সাইফ ৪৩, শান্ত ১১৭*; মুজারাবানি ১২-৪-২৭-০, এনগারাভা ৯-০-৩৬-১, টিরিপানো ১১-২-৩৩-০, নিয়াউচি ১০-১-৩৬-০, শুম্বা ১২.৪-০-৬৭-০, কাইয়া ১৩-২-৮৪-০)।
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৭৬, ৪০ ওভারে ১৪০/৩ (মিল্টন ১১, কাইতানো ৭, টেইলর ৯২, দিয়ন ১৮*, তিরিপানো ৭* ; তাসকিন ৭-০-৩৯-১, সাকিব ১২-৪-১৩-১, মিরাজ ১৪-২-৪৫-১, এবাদত ৩-০-১৯-০)।