চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
স্বপ্নকে সত্যি করার আসর
আমার কাছে মনে হয়, বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা দলগুলোর বিপক্ষে দক্ষতা প্রদর্শন ও চাপ নেওয়ার ক্ষমতা অর্জনের জন্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চেয়ে বড় আর কোনো আসর নেই। ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথমবারের মতো সেই চাপ অনুভব করি আমি যেটা পরবর্তী সময়ে আমাকে একজন ক্রিকেটার হিসেবে গড়তে ও দলকে জেতাতে দারুণভাবে সাহায্য করেছে।
আইসিসি টুর্নামেন্টগুলো যেমন, ২০ বা ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ অথবা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি- এই আসরগুলোতে ভালো পারফর্ম করতে সব ক্রিকেটারই মুখিয়ে থাকে। এটা কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজের মতো নয় সেখানে বেশ কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় ম্যাচ থাকে। এই টুর্নামেন্টগুলোতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনা থাকে। আর সেগুলো দর্শকরাও দারুণ উপভোগ করে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো আসরে ভুলের তেমন কোনো সুযোগ থাকে না। যদি ভুল হয়েই যায় তাহলে টিকে থাকার জন্য পরের ম্যাচে সর্বোচ্চটা দেওয়ার বিকল্প থাকে না। এটাই ক্রিকেটার ও দর্শকদের আনন্দ দিয়ে থাকে। যদি কোনো দল নিজের সর্বোচ্চটা দিতে না পারে তাহলে দ্রুতই ঘরে ফিরতে হয়, বিশ্বাস করুন এটা কেউই চায় না।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঘিরে বেশ কিছু ভালো মুহূর্ত রয়েছে। যার প্রথমটি ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কায়। তখন আমার বয়স ২১ বছর। অনেকবারই এই দেশটির স্লো ও টার্নিং উইকেটের কথা শুনলেও সেবারই প্রথম সেটা দেখার সৌভাগ্য হয় আমার। সেমিফাইনালে সেই ম্যাচটা হেরে যাই আমরা। ২০০৪ সালেও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় অস্ট্রেলিয়া। আমি সেই ম্যাচে না খেললেও আজও মনে আছে সেই ম্যাচটা হেরে দলের সবাই বিমর্ষ ছিল।
এরপর ২০০৬ সালে প্রায় একই দল নিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয় করি আমরা। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলাম আমরা তবে দারুণ ফিল্ডিং ও ড্যামিয়েন মার্টিনের দারুণ ব্যাটিংয়ে ফাইনালটা জিতে নেই। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, গ্লেন ম্যাকগ্রা, রিকি পন্টিংদের মতো বিশেষ কয়েকজন ক্রিকেট নায়কের সঙ্গে শিরোপা জয়ের উদযাপন করাটা আমার জন্য ছিল অন্য রকম এক অনুভূতি।
সবশেষটা ২০০৯ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আসরে সেবার প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তারকা খ্যাতিটা ধারণ করেছি আমি। গত আসরের চেয়ে এই আসরে আমাদের দলটা এরেকবারে ভিন্ন ছিল। প্রায় সব দলকে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হই আমরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালের ম্যাচ দুটি আমাকে পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তোলে। আমি সব সময়ই ওই দুটি ম্যাচের মতো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। সাদা জ্যাকেটে পডিয়ামে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতাটা সত্যিই অন্যরকম।
আমি নিশ্চিত, এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিটা অনেকেরই স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে। আশা করছি দারুণ কিছু ম্যাচ হবে যা চিরদিনের মতো মনে রাখার মতো হয়। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দীর্ঘজীবী হোক।