শেষ হাসিটা বাংলাদেশই হাসবে
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি চলে এসেছে দোরগোরায়। আর একজন বাংলাদেশি হিসেবে, আমি খুবই গর্বিত যে আমার দেশ টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচটা খেলবে, স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এটা একটা দারুণ মুহূর্ত। ম্যানচেস্টার হামলায় নিহতদের সেখানে স্মরণ করা হবে।
গত কয়েক সপ্তাহে দুই দলই গিয়েছে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে। আয়ারল্যান্ডে গিয়ে বাংলাদেশ খেলে এসেছে ত্রিদেশিয় সিরিজ। আর ইংল্যান্ড প্রস্তুতিটা দারুণভাবে সেরে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে।
প্রথম ম্যাচ হিসেবে এটা অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জন্য সেটা আরও বেশি। এই গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো কঠিন প্রতিপক্ষ থাকায়, বাংলাদেশের জন্য শুরুটা ভালোভাবে করার কোনো বিকল্প নেই। যদি তারা শুরুটা ভালোভাবে করতে না পারে, তাহলে সেমিফাইনালে যাওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ যদি নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারে ও ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে, তাহলে এটা সেমিফাইনালে যাওয়ার পথই প্রশস্ত করবে না। ক্রিকেট বিশ্বে বিস্ময়ও ছড়াবে। বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।
এই ম্যাচের টিকিট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। দুই দলই মাঠে বিপুল দর্শকের সমর্থন পাবে। ম্যাচটা হবে ইংল্যান্ডের মাটিতে। কিন্তু ওভালে প্রচুর বাংলাদেশের সমর্থকও থাকবে প্রিয় দলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা হয়তো বুঝতেও পারবেন না তাঁরা বিদেশের মাটিতে গিয়ে খেলছেন।
ইংল্যান্ডকে হারানোর কাজটা অবশ্য সহজ হবে না। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে ইংল্যান্ড দল অনেকটাই বদলে গেছে। তারা এখন খুবই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে। আর ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারানোটা সব সময়ই কঠিন। কিন্তু যদি চ্যাম্পিয়ন হতে হয়, তাহলে সেরা দলকেই হারাতে হবে। আর আমার বিশ্বাস একথাটা বাংলাদেশের মাথায় আছে যে, তাদের সবসময়ই নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত জয়টা এসেছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে। অ্যাডিলেড ওভালে। এই স্মৃতিটা কী আবার ফিরে আসবে? আমার মনে হয় আসবে। ইংল্যান্ড সেই সময়ের তুলনায় এখন অনেকটাই ভালো অবস্থানে গেছে। কিন্তু আমি সত্যিই মনে করি যে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
বাংলাদেশ এখন এমন এক জায়গায় উঠেছে, যেখানে তাদের নতুন করে কিছু প্রমাণ করার নেই। গত দুই বছর ধরে তারা দেখিয়েছে যে, যে কোনো দলকেই তারা হারাতে পারে। যদি তারা জিততে না পারে, তাহলে আমি সেটাকে তাদের ব্যর্থতাই বলব।
দুই দলের শক্তিমত্তার হিসেবেও খুব বেশি পার্থক্য নেই। ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জ্যাসন রয় ও অ্যালক্স হালেস অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। আর তাঁরা দারুণ ক্রিকেট খেলছেন। বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারও খুব বেশি পিছিয়ে নেই। তামিম অনেক অভিজ্ঞ হয়েছেন। অন্যদিকে সৌম্য পালন করতে পারেন রয়ের মতো ভূমিকা। আর সৌম্য যদি ভালো খেলতে পারে তাহলে সেটা বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো হবে। কারণ সে দ্রুত রান সংগ্রহ করতে পারে।
ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারে আছে জো রুট, ওয়েন মরগান ও জস বাটলারের মতো খেলোয়াড়েরা। যার বিপরীতে বাংলাদেশ শিবিরে আছে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসান।
পেস বোলারের হিসেবে ইংল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই কিছুটা এগিয়ে আছে। কেউ দ্রুতগতির বোলিং করতে পারেন, কেউ আবার সুইংয়ে ভালো। বেন স্টোকসের উপস্থিতিটা ইংল্যান্ডের জন্য অনেক বড় পাওয়া। সে দারুণ অলরাউন্ডার। ব্যাট অথবা বল হাতে স্টোকস একাই ম্যাচ জেতাতে পারে।
ইংল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু করবে ফেভারিট হিসেবে। কিন্তু ক্রিকেট প্রায়ই সব পরিসংখ্যান আর বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যকে ভুল প্রমাণ করতে পারে। আমি নিশ্চিত যে আমরা একটা দারুণ ম্যাচ দেখতে পাব। আর আশা করছি শেষ হাসিটা বাংলাদেশই হাসবে।