ডালমিয়ার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন!
খেলোয়াড়ি-জীবনে বেশ গম্ভীর থাকলেও অবসরের পর সৌরভ গাঙ্গুলী অনেক হাসিখুশি, অনেক প্রগলভ। ভারতীয় ক্রিকেটকে বদলে দেওয়া সেই ‘প্রিন্স অব কলকাতা’কে দেখে মনে হচ্ছিল যেন পাথরের মূর্তি! নির্বাক, নিস্তব্ধ। সৌরভের প্রিয় ‘জগুদা’ যে আর নেই! শুধু সৌরভ একা নন, জগমোহন ডালমিয়ার চিরবিদায়ে পুরো ক্রিকেট-দুনিয়াই শোকে স্তব্ধ। ক্রিকেটপ্রেমীরা এই আঘাত মেনে নিতে পারছেন না কিছুতেই। যদিও এই মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং ডালমিয়ার মেয়ে।
রোববার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ৯টার দিকে কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি ডালমিয়া। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। পরিপূর্ণ বয়সে চলে গেলেও এটা মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।
গত বৃহস্পতিবার বুকে ব্যথা অনুভব করায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ডালমিয়াকে। ভর্তির পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছিল, অবস্থা স্থিতিশীল হলেও আইসিসির সাবেক সভাপতিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। রোববার সকালেও বোঝা যায়নি, কী ‘বিপর্যয়’ অপেক্ষা করছে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য! ডালমিয়ার পরিবারের সদস্যরা বরং তিন-চার দিনের মধ্যেই তাঁকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার আশা করেছিলেন।
অবস্থার অবনতি শুরু হয় দুপুরের দিকে। চিকিৎসক অনিল মিশ্রর নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড ডালমিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা শুরু করে। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পর দুটি স্টেন্টও বসানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। ভালো অবস্থা থেকে হঠাৎ এমন অবনতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অনিল মিশ্র বলেন, ‘স্টেন্ট বসানোর সময় শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলেও রাতে হঠাৎ উনার পাকস্থলী থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। অনেক চেষ্টা করেও আমরা কিছু করতে পারিনি।’
তবে এই ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারছেন না ডালমিয়ার মেয়ে বৈশালী। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘সন্ধ্যার সময়ও আমাদের জানানো হয়েছিল, বাবা ভালো আছেন। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে যে কী হয়েছিল, তা এখনো বুঝতে পারছি না। আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, অবস্থা ভালো নয়। বাবাকে পানি পর্যন্ত খাওয়ানোর সুযোগ পাইনি। মিনিট দশেক পর জানানো হয় যে বাবা আর নেই।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যার বিরোধিতা করে বৈশালীর দাবি, ‘পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণের কথা বলা হচ্ছে কেন, বুঝতে পারছি না। বাবার কিন্তু আলসার বা এ জাতীয় কোনো সমস্যা ছিল না।’
ব্যাখ্যা যা-ই হোক, ডালমিয়া যে আর নেই এটাই এখন চরম বাস্তবতা। তাঁর বিদায়ে ক্রিকেট-দুনিয়ায় যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়।