অ্যাশেজ
ইংলিশদের হৃদয় ভেঙে অস্ট্রেলিয়ার অবিশ্বাস্য জয়
২০১৯ সালে লিডসে নিশ্চিত হারা ম্যাচ বেন স্টোকসের বীরত্ব গাথা ব্যাটিংয়ে জিতে যায় ইংল্যান্ড। ৪ বছর পর অ্যাশেজে সেই স্টোকসকে স্মরণ করালেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। অসি অধিনায়কের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়েই ইংলিশদের হারাল অস্ট্রেলিয়া। রোমাঞ্চকর জয়ে অ্যাশেজে এগিয়ে গেল সাদা পোশাকের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
টেস্ট ক্রিকেট মানেই মুহূর্তে রঙ বদলানো সেশন, শেষ দিনের উত্তাপ আর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। আর তা যদি হয় অ্যাশেজের মতো মর্যাদার লড়াই, তবে তো কথাই নেই। ভারতকে হারিয়ে সদ্যই টেস্টের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজেও ধরে রাখল ধারাবাহিকতা।
গতকাল মঙ্গলবার (২০ জুন) এজবাস্টনে ২৮১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উসমান খাজা-ক্যামেরুন গ্রিনরা আশা দেখিয়েও তা পূরণে ব্যর্থ হন। তবে শেষ দিকে প্যাট কামিন্স-নাথান লায়নদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ২ উইকেটের নাটকীয় জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
যদিও এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি ছিল। কারণ চতুর্থ দিনশেষে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ১৭৪ রান। হাতে ছিল ৭ উইকেট। যা ইংল্যান্ডের মাটিতে সহজ কাজ নয়। তার ওপর চতুর্থ ইনিংস।
বৃষ্টিতে পঞ্চম দিনের প্রথম সেশন ভেসে যাওয়ার পর দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। তবে দিনের শুরুটা প্রত্যাশা মাফিক করতে পারেনি অসিরা। দ্রুতই ২ উইকেট হারিয়ে বসে। শেষ সেশনে জয় পেতে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ৯৮ রান। হাতে ছিল ৫ উইকেট। আপাত দৃষ্টিতে দেখে খুব সহজ সমীকরণ মনে হলেও, সেই সহজ কাজটাকেই কঠিনতর করার দায়িত্ব নেন ইংলিশ বোলাররা।
চতুর্থ দিনশেষে অপরাজিত দুই ব্যাটার স্কট বোল্যান্ড ও উসমান খাজার ব্যাটে দেখেশুনে শুরু অস্ট্রেলিয়ার। তবে দলীয় ১২১ রানে বোল্যান্ডের উইকেট হারিয়ে চাপ বাড়ায় সফরকারীরা। তার বিদায়ের পর ট্রাভিস হেডকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন খাজা। দলীয় ১৪৩ রানে ফিরে যান হেড।
হেডের বিদায়ে হৃদয় ভেঙে যায় অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকদের। কারণ এরপর যে আর স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে এক ক্যামেরুন গ্রিন ছাড়া আর কেউ নেই। সেই গ্রিনকে সঙ্গী করেই দলকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করেন খাজা। দলীয় ১৯২ রানের সময় গ্রিনের বিদায়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। গ্রিনের পর ক্রিজে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি আরেক ব্যাটার উসমান খাজা। তাকে সাজঘরে পাঠান বেন স্টোকস। আউট হওয়ার আগে খাজার ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৬৫ রান।
এই দুই সেট ব্যাটারের আউটে বড় ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর প্যাট কামিন্সকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন অ্যালেক্স ক্যারি। তার প্রতিরোধ থামান জো রুট।
ক্যারির বিদায়ের পর ম্যাচটা দুলে ছিল ইংলিশদের দিকে। মনে হয়েছিল, ইংলিশদের জয় স্রেফ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু অসি অধিনায়ক কামিন্স যে অন্য গল্প লিখবেন সেটা কে জানতো? উইকেটে থিতু হয়ে পুরো সমীকরণ পাল্টে দিলেন কামিন্স। নাথান লায়নকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক। দলকে জেতাতে ৭৩ বলে ৪৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেন কামিন্স।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের করা ৩৯৩ রানের বিপরীতে ৩৮৬ রান করে অস্ট্রেলিয়া। ৭ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৩ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। যার ফলে ২৮১ রানের লক্ষ্য পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তবে সেই কঠিন লক্ষ্য পাড়ি দিয়ে ঠিকই জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৭৮ ওভারে ৩৯৩/৮ ডিক্লেয়ার
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস : ১১৬.১ ওভারে ৩৮৬
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস : ৬৬.২ ওভারে ২৭৩ (ক্রওলি ৭, ডাকেট ১৯, পোপ ১৪, রুট ৪৬, ব্রুক ৪৬, স্টোকস ৪৩, বেয়ারস্টো ২০, মঈন ১৯, রবিনসন ২৭, ব্রড ১০ ও অ্যান্ডারসন ১২ ; কামিন্স ১৮.২ -১-৬৩-৪, হ্যাজেলউড ১০-১-৪৮-১, লায়ন ২৪-২-৮০-৪, বোল্যান্ড ১২-২-৬১-১, গ্রিন ২-০-১২-০)।
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস : ৯২.৩ ওভারে ২৮২/৮ (খাজা ৬৫, ওয়ার্নার ৩৬, লাবুশেন ১৩, স্মিথ ৬, বোল্যান্ড ২০, হেড ১৬, গ্রিন ২৮, ক্যারি ২০, কামিন্স ৪৪*, লায়ন ১৬ ; অ্যান্ডারসন ১৭-১-৫৬-০, ব্রড ২১-৩-৬৪-৩, রবিনসন ১৮.৩-৭-৪৩-২, মঈন ১৪-২-৫৭-১, রুট ১৫-২-৪৩-১, স্টোকস ৭-২-৯-১)।
ফল : ২ উইকেটে জয়ী অস্ট্রেলিয়া।