কাঁটার যন্ত্রণা দিয়ে বাংলাদেশকে প্রোটিয়াদের ‘শুভকামনা’
পরাজয় সব সময় তিক্ততার। গেল রাতে এই তিক্ততার গল্প লিখে হোটেলে ফেরা রাত ১টায়। পরদিন তথা আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) গন্তব্য কলকাতা। ফ্লাইট বিকেলে হলেও খবরের খোঁজে পাঁচ ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে চলে আসা। কারণ আর কিছুই নয়, একই দিনে বাংলাদেশও ছুটেছে কলকাতায়। কিন্তু, এত দৌড়ঝাঁপ করে আসাটা কাজে দিল না। এয়ারপোর্টে যখন পা রাখলাম, মিরাজদের তখন বোডিং কল বেজে গেছে।
বাংলাদেশ দলকে না পেয়ে যখন একলা বসে আছি, ঠিক তখন দূর থেকে দেখলাম একজনকে। তিনি আর কেউ নন, গতকাল বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দেওয়া কুইন্টন ডি কক। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে বাংলাদেশের বিপক্ষে রুদ্রমূর্তি ধারণ করা কুইনিকে আজ দেখা গেল শিশুসুলভ ভঙিমায়। সিকিউরিটি ক্রস করে সামনে আগাচ্ছেন আর একে একে মেটাচ্ছেন ভক্তদের ছবি তোলার আবদার। চেকিং থেকে শিবাজি ছত্রপতি বিমানবন্দরের ৬৫/এ নম্বর গেট পর্যন্ত আসার পথে প্রায় ২০-২৫ জনের ছবির আবদার মিটিয়েছেন।
এর মাঝেই ডাক দিলাম কুইনিকে। অভিনন্দন জানিয়ে বললাম, বাংলাদেশি সাংবাদিক। পেছনে তাকিয়ে ছোট্ট করে ধন্যবাদ জানালেন। বিলম্ব না করে জিজ্ঞাস করে ফেললাম, বিশ্বকাপের এক আসরের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড কি এবার নিজের করে ফেলবেন? কুইন্টন জবাব না দিয়ে মুচকি হাসি উপহার দিলেন।
নিরবতা অনেক সময় সম্মতির লক্ষণ। এই হাসির মানে হয়ত হ্যাঁ বোধকই হবে। যেভাবে তিনি ছুটছেন তাতে রোহিত শর্মার এক আসরে পাঁচ সেঞ্চুরি করার রেকর্ড ভাঙাটা খুব কষ্ট হবে না তার জন্য। মাত্র পাঁচ ম্যাচে যিনি তিনটি শতক করে ফেলেছেন, লিগ পর্বের বাকি চার ম্যাচে আরও দুটি করা তার পক্ষে কঠিন কিছু না। দল সেমিফাইনালে উঠলে সুযোগ তো আছেই সংক্যাটা বাড়িয়ে নেবার। আপাতত, কুইনি কতদূর গিয়ে থামেন সেটিই দেখার পালা।
যা হোক ফিরি এয়ারপোর্টের গল্পে। কুইন্টনকে অনুসরণ করে যখন সামনে হাঁটছিলাম তখন পেছন থেকে আমার কাঁধে থাকা ব্যাগটা উঁচিয়ে ধরলেন কাগিসো রাবাদা। হাসতে হাসতে বললেন, গন্তব্য কোথায়? জানালাম কলকাতা। পাল্টা প্রশ্নে রাবাদার কাছে জানতে চাইলাম গতকালের ম্যাচ নিয়ে। চলতি পথেই উত্তর দিলেন, 'আমাদের জন্য এটা দারুণ ম্যাচ ছিল। ভেবেছিলাম লড়াই হবে, এত সহজে জিতব বুঝিনি। নাউ ফিলিং গুড।'
একটু পরে দেখা কেশভ মহারাজের সঙ্গে। গত ম্যাচের দিকে না গিয়ে শুধু বাংলাদেশকে 'শুভকামনা' জানালেন মহারাজ। সঙ্গে ছিল তার পরিবার। তাই, কথা হয়ত বাড়ালেন না। ছুটে গেলেন বোডিং গেটের দিকে। বাকিদেরও দেখলাম হাসিমুখে। শুধু চুপচাপ ছিলেন নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
মুম্বাই ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গন্তব্য চেন্নাই। সেখানেই ছন্দে থাকা প্রোটিয়ারা লড়বে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আর হতাশায় ডোবা বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে। টানা চার ম্যাচ হেরে তলানিতে থাকা বাংলাদেশ কলকাতাতে খেলবে দুটি ম্যাচ। চার শহরে চার হারের পর নতুন শহরে ভাগ্য খোলে কিনা সেটিই বড় প্রশ্ন।
আপাতত ১০ দলের বিশ্বকাপে ১০ নম্বর হয়েই বলিউডের শহর মুম্বাই ছাড়ল লাল-সবুজের দল। সঙ্গে নিয়ে গেল কাঁটার আঘাত দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার শুভেচ্ছা বার্তা!