কথার লড়াইয়ে সরব কোহলিরা মাঠে নিষ্প্রভ
ইটস কামিং টু স্লো—পার্থ টেস্টে ব্যাটিংয়ের সময় এভাবেই অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ককে খোঁচা দিয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল। পরবর্তীতে জবাবটা কিভাবে দিয়েছেন স্টার্ক, তা সবারই জানা। শুধু জয়সওয়াল নয় মাঠে পারফর্ম করতে না পারলেও কথার লড়াইয়ে একচুলও ছাড় দেয়নি সিরাজ-কোহলিরা। স্লেজিংয়ে ভারতকে না হারাতে পারলেও মাঠের ক্রিকেটে ঠিকই ধরাশায়ী করে ছেড়েছে প্যাট কামিন্সরা।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ম্যাচ মানেই দুই দলের ক্রিকেটারদের কথার লড়াই। যা দুই দেশের মাঠের লড়াইকে আরও বাড়িয়ে দেয়। সদ্য সমাপ্ত বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির শুরু থেকেই নানানভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। যা প্রভাব ফেলেছে তাদের পারফরম্যান্সে। গতবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা দলটা এবার রীতিমত হতাশ করেছে সমর্থকদের।
সাধারণত স্লেজিং করার জন্য খ্যাতি রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু সৌরভ গাঙ্গুলী এবং বিরাট কোহলি অধিনায়ক থাকার সময় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের স্লেজিং সহ্য করতে হয়েছে। সেই আগ্রাসী মনোভাব এখনও চলছে। তবে, সেই আগ্রাসী মনোভাবই এবার কাল হলো ভারতের। স্লেজিংকে অস্ত্র বানাতে গিয়ে অসিদের পাতা ফাঁদেই পা দিয়েছেন দলটির ব্যাটাররা।
উদাহরণস্বরুপ তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলির নাম বলা যায়। পুরো সিরিজে মাত্র একটি সেঞ্চুরি ছাড়া তেমন কোনো অর্জন নেই কোহলির। এমন নাজুক পারফরম্যান্সে তার দলে সুযোগ পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মজার ব্যাপার হলো, ব্যাট হাতে ছন্দহীন কোহলি কথা লড়াইয়ে ছিলেন বেশ এগিয়ে। তাকে সঙ্গ দেন উইকেটরক্ষ রিশাভ পন্থ ও মোহাম্মদ সিরাজ, বুমরাহ এর মতো পেসাররা।
২০২৪-২৫ বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি ঘটনা
১. ইটস কামিং টু স্লো
পার্থে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে ভারত অল আউট হওয়ার পর দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফেরে টিম ইন্ডিয়া। ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ১৬১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। সেই ম্যাচে নজর কাড়ে স্টার্ক-জয়সওয়াল কথার লড়াই। স্টার্কের একটি বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করেই যশস্বী বলে ওঠেন ইটস কামিং টু স্লো—তরুণ এক ক্রিকেটারের মুখে এমন কথা শুনে মৃদু হেসে ওঠেন স্টার্ক। তাৎক্ষণিক জবাব না দিলেও অ্যাডিলেইড টেস্টে ঠিকই প্রতিশোধ নেন স্টার্ক। প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরার জয়সওয়ালকে।
২.ট্রাভিস হেড ও মোহাম্মদ সিরাজের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়
পার্থে হারলেও অ্যাডিলেইড টেস্টে দারুণ জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। অসিদের এমন জয়ের পেছনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল ব্যাটার ট্রাভিস হেডের। ১৭ চার ও ৪ ছক্কায় তার চোখধাঁধানো ব্যাটিংয়ের সুবাদেই দিবা–রাত্রির টেস্টে বড় জয়ে সমতায় ফেরে অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট হাতে ১৪০ রানের ইনিংস খেলেন হেড। এমন ব্যাটিংয়ের পর হেডকে আক্রমণাত্মক মেজাজ নিয়ে মাঠ ছাড়তে বলেন সিরাজ। দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। এই ঘটনায় সিরাজকে ম্যাচ ফির ২০ শতাংশ অর্থ জরিমানা করা হয়। একটি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হয় সিরাজের হিসাবের খাতায়। হেডের শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত খাতাতেও যোগ হয়েছে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট। তবে কোনো জরিমানা করা হয়নি তাকে, শুধু তিরস্কার করা হয়।
৩. কনস্টাসকে কোহলির ধাক্কা
এমসিজি টেস্টের প্রথম দিনের ঘটনা। মোহাম্মদ সিরাজের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ওভারটি শেষ করার পর হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে অন্য প্রান্তের সতীর্থ ব্যাটসম্যান উসমান খাজার দিকে যাচ্ছিলেন অভিষিক্ত স্যাম কনস্টাস। তখন উল্টো দিক থেকে বল হাতে এগিয়ে আসছিলেন বিরাট কোহলি। অনেকটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ১৯ বছর বয়সী কনস্টাসের দিকে এগিয়ে এসে তার কাঁধে ধাক্কা মারেন কোহলি। আইসিসি আচরণবিধির লেভেল ওয়ান পর্যায়ে অপরাধের দায়ে কোহলিকে তাঁর ম্যাচ ফির ২০ শতাংশ জরিমানা এবং একটি ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হয়েছে।
৪.কনস্টাসকে যশস্বী-বুমরাহদের স্লেজিং
সিডনিতে প্রথম দিন খেলার শেষ বলে অসি ওপেনার উসমান খাজাকে আউট করেন জসপ্রিত বুমরা। তারপরই অন্যপ্রান্তে থাকা কনস্টাসের দিকে তিনি তেড়ে যান। কনস্টাস স্লেজিং করায় তার সামনে গিয়ে আগ্রাসীভাবে উদযাপন করেন বুমরাহ। তার সঙ্গে যোগ দেন বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলেরা। পরে আম্পায়ারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দ্বিতীয় দিন কনস্টাস যখন ব্যাটিং করছিল তখন উইকেটের পেছন থেকে কনস্টাসকে স্লেজিং করেন জয়সওয়াল ও রিশাভ পন্থরা। হিন্দিতে জসওয়ালকে বলতে শোনা যায় - ‘কী হল রে এখন শট দেখতে পাচ্ছিস না নাকি রে, ওয়ে কনস্টাস এখন শট মারা যাচ্ছে না নাকি।’
ভারতীয়দের এমন আচরণে বিরক্ত অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড। তার মতে, শাস্তির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা মাঠে যা ইচ্ছে তাই করছে। আমার মনে হয়, আইসিসির বিষয়টি দেখা উচিত। অদূর ভবিষ্যতে যে এই দুই দলের কথার লড়াই আরও উত্তাপ ছড়াবে, তা তো বলাই বাহুল্য।