যে ৫ কারণে পদত্যাগ করলেন টুইটার সিইও
বিনিয়োগকারীদের চাপের মুখে গত বৃহস্পতিবার মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারের সিইও ডিক কস্টোলো পদত্যাগ করেছেন। মূলত ২০১৩ সালে সাইটটি বাজারে শেয়ার ছাড়ার পর থেকেই তাঁর ওপর বিভিন্ন চাপ আসা শুরু করে। একসময় টুইটারকে ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হলেও পরবর্তী সময়ে এই সাইট ব্যবসায়িক এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে ডিক কস্টোলোর পদত্যাগের শক্তিশালী পাঁচটি কারণ।
১. ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে ভাটা
যেখানে ফেসবুকে প্রায় ১০০ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে, সেখানে টেনেটুনে ৩০ কোটির কিছু বেশি ব্যবহারকারী নিয়মিত রয়েছে টুইটারে। এমনকি সংখ্যাটি বাড়ার তেমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। ফেসবুক থেকে এই বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া তাদের হতাশাকে বাড়িয়ে তুলছে দিন দিন। এমনকি ধারণা করা হচ্ছে, ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কয়েক দিন পর টুইটারকে ছাড়িয়ে যাবে। ডিক কস্টোলোর নেতৃত্বে থাকা টুইটার কর্তৃপক্ষের কোনো পরিকল্পনাই সফল হয়নি তাদের এই দৈন্যদশা কাটিয়ে উঠতে।
২. ব্যবহারকারীদের কাছে স্পষ্টতার অভাব
টুইটার যে আসলে কী করছে, এটাই তার ব্যবহারকারীদের কাছে স্পষ্ট নয়। টুইটার কি আদৌ অন্য কোনো অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট করবে, নাকি করবে না? তারা কি টুইট করার জন্য ক্যারেক্টার বা চিহ্নের সীমাবদ্ধতা ১৪০-এই রাখবে, নাকি আরো বেশি কিছু লেখার সুযোগ দেবে ব্যবহারকারীদের? টুইটার কি একাই চলবে, নাকি ডেভেলপারদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে? এসব জায়গায় কখনোই স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেনি কস্টোলো বাহিনী; বরং কয়েক বছর ধরে কিছু আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ব্যবহারকারীরা আরো মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে টুইটার থেকে।
৩. স্পষ্ট কোনো ব্যবসায়িক মডেল নেই
ব্যবসায়িকভাবে টুইটার কখনো লাভজনক হতে পারেনি। অবশ্য এর জন্য টুইটার নিজেই দায়ী। এখানে মেসেজ-টুইট থেকে শুরু করে সবকিছু এত ছোট যে, ভালোভাবে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করার কোনো উপায় নেই। আর ব্যবহারকারী কম থাকায় এটি বিজ্ঞাপনদাতাদেরও মন জয় করতে পারেনি তেমন। টুইটার বেশ কয়েকবার এই দুর্দশা কাটানোর চেষ্টা করলেও কস্টোলোর এখানেও ব্যর্থ।
৪. আত্মপরিচয়ের সংকট
টুইটার আসলে কী? এখানে মানুষ কী করে? কেউ কেউ বলে, এটি একটি মাইক্রোব্লগিং সেবা। আবার অনেকের মতে, এটি নিরেট এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু আসলে কোনো উত্তরই ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্ট করার মতো নয়। কারণ, এর ধরনটাই আসলে এখনো অস্পষ্ট। ফেসবুক যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে, টুইটার কখনোই এ রকম কিছু পারেনি; বরং কাজের ধরন দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের থেকে টুইটারকে একটি মিডিয়া কোম্পানি বলে মনে হয়েছে। টুইটারের মূল বিষয়সূচি কিংবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণে এবং প্রকাশে সব সময়ই কস্টোলো ব্যর্থ ছিলেন।
৫. একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া
টুইটারের কোর্টে যতবারই বল ছিল, তারা বারবার ভুল শট খেলে নিজেদের ডুবিয়েছে। মানুষ যখন ইন্টারনেটে বসে সারা দিন চ্যাট করে আর মেসেজ পাঠিয়ে সময় কাটাচ্ছে, তখন টুইটারে চ্যাট করার কোনো সুবিধাই নেই। উল্টো সরাসরি মেসেজ পাঠাতে হবে ১৪০ ক্যারেক্টারের মধ্যে। যদিও কস্টোলোর পদত্যাগের পর মেসেজে ক্যারেক্টার সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে টুইটার। ফেসবুকের মতো সাইট কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ-ভাইবারের মতো অ্যাপ হাতে থাকলে কার দায় পড়ে তখন টুইটার ব্যবহার করার? টুইটার সব সময়ই ব্যর্থ হয়েছে সরাসরি মেসেজের এই সেবা জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে। এর পর সার্চের ক্ষেত্রে। টুইটার যখন গুগলের সঙ্গে যুগলবন্দী ছিল, তখন তারা কিছুটা জনপ্রিয় হয়েছিল।
কারণ, গুগলে কিছু সার্চ করলে সে সম্পর্কিত টুইটগুলোও তখন দেখা যেত। কিন্তু তার পর এর থেকে বেরিয়ে এসে পরবর্তীকালে টুইটার একত্র হলো মাইক্রোসফটের বিংয়ের সঙ্গে, যার ফলাফল ছিল খুবই বাজে। গুগলের সঙ্গে টুইটারের বন্ধন আবার জোড়া লাগলেও আগের মতো সেটি আর ফল বয়ে আনতে পারছে না। ডিক কস্টোলো প্রায়ই এ রকম নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছেন।