ঈদের ছুটিতে
পাখির স্বর্গ ও হাওরের দেশে
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকৃতির দানে সমৃদ্ধ। সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি এবং দর্শনীয় স্থান। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই হাওর স্থানীয় লোকজনের কাছে নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত।
টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টির বেশি ঝর্ণা এসে মিশেছে এই হাওরে। বিভিন্ন জাতের পাখি টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম। স্থানীয় জাতের পাখি ছাড়াও শীতকালে, সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা পাখির আবাস এই হাওর। এ হাওরে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। পাখি ছাড়াও টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম হলো জলজ উদ্ভিদ। এ ছাড়া আছে হিজল, করচ, বরুণ, পানিফল, হেল হেলেঞ্চা, বন তুলসী, নলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া ইত্যাদি জাতের উদ্ভিদও।
টাঙ্গুয়ার হাওর ও সুনামগঞ্জে যা দেখবেন
আপনি সুনামগঞ্জে দেখতে পারেন সুরমা নদী, হাসন রাজার বাড়ি এবং সমাধি, নারায়ণতলা, ইন্ডিয়ার বর্ডার বাজার, শাহ আরেফিনের মাজার, গৈরারং জমিদারবাড়ি, শাহ আবদুল করিমের বাড়ি।
আপনি টাঙ্গুয়ার হাওরের সঙ্গে দেখবেন বারিক্কাটিলা টিলা, শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী, অদ্বৈত মহাপ্রভুর বাড়ি, বাংলাদেশের কাশ্মীর নামে পরিচিত অনেকে একে ভালোবেসে নীলাদ্রি নামে ডেকে থাকেন (চুনাপাথরের লেক), টেকেরঘাট ও বড়ছড়া।
কীভাবে যাওয়া যায়
টাঙ্গুয়া যেতে হলে প্রথমে আপনাকে সুনামগঞ্জ আসতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সুনামগঞ্জ অভিমুখী বাস আসে।
প্রথমে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকা থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এনা পরিবহন, মামুন পরিবহনের নন-এসি বাস যায় সুনামগঞ্জ। ভাড়া এসি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। আমাদের সকাল ৬টার দিকে বাস থেকে নেমে আবদুজ জহুর সেতুর ওপর থেকে মোটরসাইকেলে করে টেকেরঘাটের উদ্দেশে রওনা দিতে হবে (টেকেরঘাট পর্যন্ত সরাসরি মোটরসাইকেল রিজার্ভ নিতে হবে, এ ক্ষেত্রে ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা নিতে পারে আর মাঝপথে যাদুকাটা নদী পার হতে জনপ্রতি ভাড়া পাঁচ টাকা আর মোটরসাইকেলের ভাড়া ২০ টাকা)।
পথে বড়ছড়া বাজার থেকে সকালের নাশতা করে নিতে হবে। টেকেরঘাট পৌঁছে সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে ঘুরে আসতে হবে টাঙ্গুয়ার হাওর এবং ওয়াচ টাওয়ার। ফেরার পথে বাংলাদেশের কাশ্মীর নামে পরিচিত নীলাদ্রি চুনাপাথরের লেক ঘুরে বড়ছড়া বাজার থেকে দুপুরের নাশতা করে বারিক্কাটিলা টিলা, শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী এবং অদ্বৈত মহাপ্রভুর বাড়ি ঘুরে এসে সুনামগঞ্জ শহরে রাত যাপন করতে হবে।
পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সুনামগঞ্জ শহরে এবং সুরমা নদী, হাসন রাজার বাড়ি ও সমাধি, নারায়ণতলা, ইন্ডিয়ার বর্ডার বাজার, শাহ আরেফিনের মাজার, গৈরারং জমিদারবাড়ি, শাহ আবদুল করিমের বাড়ি ঘুরে দেখে রাতের বাসে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে সুনামগঞ্জ ত্যাগ করতে হবে।
কোথায় থাকবেন
সুনামগঞ্জ শহরে ৩০০ থেকে শুরু করে হাজার টাকার মধ্যে থাকার জন্য হোটেল ভাড়া করতে পারবেন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে বেশ কিছু আবাসিক হোটেলের দেখা মিলবে। নিজের চাহিদামতো বাছাই করে নিন।
রয়েছে হোটেল নূর, হোটেল সারপিনিয়া, হোটেল নূরানী, হোটেল মিজান, হোটেল প্যালেস, সুরমা ভ্যালী আবাসিক রিসোর্ট।
কোথায় খাবেন
সুনামগঞ্জ শহরে অনেক খাবারের হোটেল আছে। এ ছাড়া বারেক টিলাতে খাবারের হোটেল আছে। বড়ছড়া বাজারে খেতে পারেন অথবা লেকের পাশেই টেকেরঘাটে একটা ছোট বাজার আছে।
খরচ কেমন পড়বে
ঢাকা-সুনামগঞ্জ (নন-এসি ৫৫০ টাকা, এসি-৮০০ টাকা); সুনামগঞ্জ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে সুরমা ব্রিজ পাড়ি দিন (১০ টাকা/প্রতিজন); সেখান থেকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা টেকেরঘাট। ইঞ্জিনচালিত নৌকা অথবা ট্রলার ভাড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। খাবার খরচ ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা প্রতিজন চাহিদা অনুযায়ী। হোটেলের থাকার খরচ ৩০০/১০০০ (দুজন)।