ছারপোকার কারণে কয়েদির মৃত্যু, দাবি নিহতের পরিবারের আইনজীবীর
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার কারাগারে ৩৫ বছর বয়সী এক কয়েদির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই কয়েদিকে জীবন্ত অবস্থায় ছারপোকাসহ বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে ফেলেছে বলে দাবি করছে নিহতের পরিবারের আইনজীবী। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ফৌজদারি তদন্তের পাশাপাশি জেলটি বন্ধ এবং প্রতিস্থাপনের দাবি করছে। যদিও কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ও ছারপোকা বিশেষজ্ঞ মাইকেল পটারের মতে এমন ভয়াবহ পর্যায়ের কোনো কিছু তিনি কখনই দেখিনি। বিছানার পোকার কামড় সাধারণত প্রাণঘাতী হয় না। আজ শনিবার (১৫ এপ্রিল) মার্কিন গণমাধ্যম নিউইয়র্কের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
নিহত ব্যক্তির নাম লশন থম্পসন। ২০২২ সালে ১২ জুন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে, লশন মানসিকভাবে অসুস্থ বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ। এরপরেই তাকে ফুলটন কাউন্টি জেলের মনস্তাত্ত্বিক শাখায় নেওয়া হয়। সেখানেই গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। হৃদরোগে লশন মারা গেছে বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
থম্পসন পরিবারের আইনজীবী মাইকেল ড. হার্পার অভিযোগ করে বলেন, ‘ফুলটন কাউন্টি জেলে নেওয়ার তিন মাসের মাথায় লশন মারা গিয়েছিল। জেলে থাকা পোকামাকড় ও সেলের ছারপোকায় তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। যখন তারা লশনের মরদেহটি উদ্ধার করেন, তখন কারা কর্মীরা তাকে সিপিআর দিতে চাননি। কারাকর্মীরা তার শরীর দেখে ভয় পেয়েছিলেন।’
হার্পার আরও বলেন, ‘লশনকে যেখানে রাখা হয়েছিল সেটার পরিবেশ মানুষের থাকার অযোগ্য। মানসিকভাবে অসুস্থ একজন ব্যক্তিকে পোকামাকড়ের সঙ্গে কীভাবে রাখা হয়। লশন এমনটির যোগ্য ছিলেন না। কাউকে তো তার মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।’
লশনের মৃত্যুর জন্য ফুলটন কাউন্টি জেলের অস্বাস্থ্যকর অবস্থাকে দুষছেন হার্পার। এই আইনজীবী অভিযোগ করে বলেন, ‘লশনের অবস্থা সম্পর্কে কারা কর্মীরা জানত। তবে, তাকে কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি।’
মৃত লশনের বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছেন হার্পার। ওসব ছবিতে মরদেহের বাজে অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। এমনকি, সেলের ভয়ঙ্কর ও অস্বাস্থ্যকর অবস্থা দেখা যায়।
মার্কিন গণমাধ্যম ইউএস টুডে জানিয়েছে, লশনের মেডিকেল প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তার শরীরের পোকামাকড়ের কামড়ের অনেক চিহ্ন ছিল। তবে, মৃত্যুর কারণে অজ্ঞাত হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।
এদিকে, ফুলটন জেলের পোকামাকড় দমনে ও লশনের মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে আটলান্টার কাউন্টি শেরিফ কার্যালয়। এক বিবৃতিতে তারা বলছে, ‘লশনের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করা হচ্ছে। কারাগারে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে পাঁচ লাখ ডলার খরচ করা হবে। নিরাপত্তা প্রোটোকল আধুনিক করা হবে।’
কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ও ছারপোকা বিশেষজ্ঞ মাইকেল পটার বলেন, ‘আমি গত ২০ বছরের বেশি সময় ছারপোকা নিয়ে কাজ করেছি। কিন্তু, এমন ভয়াবহ পর্যায়ের কোনো কিছু আমি কখনই দেখিনি। বিছানার পোকার কামড় সাধারণত প্রাণঘাতী হয় না। তবে, অল্প কিছু ক্ষেত্রে ভয়াবহতা দেখা যায়। যদি বেশি পোকামাকড় আক্রমণ করে তাহলে রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। চিকিৎসার মাধ্যমে এটি ঠিক করা যায়।’